দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। জরিপের পারিবারিক মনস্তত্ত্ব অংশের ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। গত সোমবার রাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ‘পরিবার পর্যায়ে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান’ শীর্ষক এক আলোচনায় সংস্থাটির সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। গত মে মাসে দেশের আট হাজার ৬৭টি খানার মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। জরিপে মানুষের উদ্বেগের কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সন্তানের শিক্ষা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ৬৫ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া কিশোর অপরাধ ও মাদক নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৫ ও ৫৬ শতাংশ মানুষ। ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে মানুষ ৫৩ শতাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক সম্মানের কথা বলেছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি চায় তারা। রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে ৫৬ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি প্রতিরোধের কথা বলেছে। সার্বিকভাবে নানা সংকট ও উদ্বেগের কারণে প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা হারালেও ৫৪ শতাংশ মানুষ এখনো হাল ছেড়ে দিতে নারাজ।
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, রাষ্ট্রকে কাঠামোগতভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। এখানে যারা সংগঠিত তারা সুবিধা নিচ্ছে, কিন্তু জনগণ অসংগঠিত থাকায় তাদের ভাগ পাচ্ছে না। আগে সমাজে অর্থ উপার্জন তৃতীয় প্রধান বিষয় থাকলেও এখন মানুষ যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনে প্রাধান্য দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি লড়াকু মনোভাব কারো নেই। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই মনোভাবই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি বা জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি সবার জন্য প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ। অনেকের আয় কমে যাওয়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। উচ্চবিত্তদের আয়ের ক্ষেত্রেও কিছুটা পতন লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া অনেক উদ্যোক্তা পুঁজির অভাব (ক্যাপিটাল শর্টেজ) অনুভব করছেন। অন্যদিকে উচ্চবিত্তদের জন্য ঋণ পরিশোধ (লোন রিপেমেন্ট) দ্বিতীয় প্রধান উদ্বেগের স্থান দখল করেছে। আর তৃতীয় উদ্বেগ হলো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৪০ শতাংশ দরিদ্র পরিবার।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের (দায়রা) গবেষক ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, তরুণদের ক্ষোভ বাড়লেও তাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্বল হবে না। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিচালনা পদ্ধতির কারণেই ক্ষোভ বাড়ছে। কেন বারবার অভ্যুত্থান হলেও সংস্কার করা যায়নি, সেটি বড় প্রশ্ন। হয়রানির বিষয়গুলো অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং কাগজে থাকলেও বাস্তবে সেবা না পাওয়ার কারণে তা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে হয়রানির প্রবণতা বেশি। শহরে ভাসমান মানুষ বেশি থাকায় এটা হতে পারে। এটার কারণ আরো খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এই জরিপ প্রতিবছর পরিচালনার আহবান জানান তিনি।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের বড় অংশ আশাবাদী নয়, এটা হতাশাজনক। কেন এত দ্রুত মানুষের একটি বড় অংশের আশা চলে গেল, সেটা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ