ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনা হলো যেসব বিষয়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৭, আগস্ট ২৮, ২০২৫
বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনা হলো যেসব বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন। ছবি: শাকিল আহমেদ

যৌথ আলোচনার দলিল সইয়ের মধ্য দিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের চারদিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। ২৫ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন।

অন্যদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের মাধ্যমে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।  

জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের বেলায় টহল জোরদার করে সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন।  

উভয়পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নেওয়া, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে প্রেষণা দেওয়া এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি, ভারতীয় নাগরিক ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।  

বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের পারস্পরিকভাবে সম্মত প্রক্রিয়া অনুযায়ী ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দেন।

সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, স্বর্ণ, জাল নোট ও অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার’ গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এ সময় উভয়পক্ষ রিয়েল-টাইম তথ্য বিনিময়, অধিক সতর্কতা এবং যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এসব অপরাধ দমনে সতর্ক ও দৃঢ় থাকার বিষয়ে একমত হয়।

সীমান্তবর্তী জনগণকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন ভঙ্গ করে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত স্তম্ভ অপসারণ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ থেকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। সার্বিকভাবে সীমান্তের অখণ্ডতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও তারা জানিয়েছে।

এ ছাড়া সীমান্ত শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে উভয় পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়। সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা এবং যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদিত নদীতীর সংরক্ষণ কার্যক্রম সহজতর করাসহ অভিন্ন নদীগুলোতে অননুমোদিত কাজ বন্ধ রাখার বিষয়েও তারা একমত হয়।

‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় তিনবিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রামকে যুক্ত করতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্নের বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থান প্রসঙ্গে উভয় প্রতিনিধিদল ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করে। তারা রিয়েল-টাইম তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে এসব গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে।

ফেনীর মুহুরীর চর এলাকায় স্থায়ী সীমান্ত পিলার নির্মাণ এবং ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল ও হারিয়াভাঙ্গা নদী এলাকায় সীমান্ত নির্ধারণ কাজ দ্রুত শেষ করার ওপর জোর দেন বিজিবি মহাপরিচালক। বিএসএফ মহাপরিচালক এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে সমাধানের আশ্বাস দেন।

দুই পক্ষই আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে একমত হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইটের তথ্য রিয়েল-টাইমে শেয়ার করার বিষয়ে সম্মত হয়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা এড়াতে উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যম যেন কোনো বিভ্রান্তিকর প্রচারণা বা গুজব ছড়ায় না, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে।

সম্মেলনের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে দুই মহাপরিচালক সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।