ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুন ২০২৫, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

বিকেলে বৈঠক, সরকারি কর্মচারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন আইন উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৪৪, জুন ১৬, ২০২৫
বিকেলে বৈঠক, সরকারি কর্মচারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন আইন উপদেষ্টা কথা বলছেন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

ঢাকা: সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে প্রথম বৈঠকে বসছে এ সংক্রান্ত গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে সোমবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান কমিটির আহ্বায়ক ও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে সকাল ১১টায় সচিবালয়ে বাদামতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। এরপর তারা গণপূর্ত উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেন।

কর্মচারীদের আন্দোলন এবং কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা আজ বিকেল ৪টায় মিটিংয়ে বসছি। সেখানে তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করবো। আমরা সুপারিশগুলো উপদেষ্টা পরিষদে তুলবো। আমি বলবো, সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

কমিটির প্রধান আইন উপদেষ্টা বলেন, আইনটি (সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ) নিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন আইটি অবশ্যই পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আমি আসলে তখন বিদেশে ছিলাম। আইনটি প্রণয়নের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। পরবর্তীকালে আমি যখন আইনটি দেখেছি, দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে যে অবশ্যই এটি পুনর্বিবেচনার স্কোপ রয়েছে কিছু কিছু জায়গাতে।

আসিফ নজরুল বলেন, আমি শুধু একটা জিনিস আপনাকে বলতে পারি, সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করেনি। এখন অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করা না হলেও কোনো কোনো আইনের মধ্যে এমন বিধান থাকতে পারে, আইনের যারা সাবজেক্ট হতে পারেন, এই আইন দ্বারা বিড়ম্বনা-হয়রানির শিকার হতে পারেন। সেটা আমরা স্বীকার করি যে, এ রকম সম্ভাবনা এই আইনের মধ্যে থাকতে পারে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন। সবার মধ্যে একটা বিভ্রান্তি কাজ করে, যে কোনো অধ্যাদেশ আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জারি হয়। সেটার মানে এটা নয় যে এটা আইন মন্ত্রণালয় করেছে। আইন মন্ত্রণালয় এটার এক্সিকিউটিভ অথরিটিও না। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন। আমাদের শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট নোটিফিকেশন আকারে জারি করতে হয়। আমাদের ইনভলমেন্ট এখানে ছিল না।

আসিফ নজরুল বলেন, কমিটির প্রধান হিসেবে, আমাদের কমিটিতে আমাদের ফাওজুল ভাই রয়েছেন, তিনি অত্যন্ত সিনিয়র এবং অত্যন্ত যোগ্য একজন উপদেষ্টা। উনি একজন দক্ষ আমলাও ছিলেন। আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব উনি দক্ষ একজন আমলা। আমরা আজকে বিকেল ৪টায় মিটিংয়ে বসবো। মিটিংয়ে বসে আমাদের সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা যে দাবিগুলো দিয়েছিল সেগুলো আমরা কী কী বিবেচনা করব, কীভাবে করব সেগুলো ঠিক করব। ঠিক করার পর আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা রিপোর্ট উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে তুলবো। আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক না।

আমাদের যারা সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আছেন, তাদের অনুরোধ করব আপনারা যদি একটু ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দেন ভালো হয়। দেখেন না আমাদের কমিটির কাজ যদি পছন্দ না হয় তাহলে দেন। সচিবালয়ের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। চাইলে বিবৃতিতে দেন, আপনারা আমাদের সাথে মিটিং করেন। কিন্তু সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় সেজন্য লক্ষ্য রাখেন। আমাদের কমিটির কাজটা না হওয়া পর্যন্ত একটু লক্ষ্য রাখবেন। আশা করি, সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত না হয়, মানুষের দুর্ভোগ না হয়।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনা ও আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সুপারিশ দিতে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে ৪ জুন একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এই কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদকে সদস্য করা হয়েছে।

গঠিত কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব। কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।

এর আগে ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন হয়। আর ২৫ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়। চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই তা প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। তারা এই অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে অবহিত করছেন। গত কয়েক দিনে মোট আটজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।

এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।