ঢাকা, বুধবার, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১১ জুন ২০২৫, ১৪ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের চতুর্থ দিনেও ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, ফিরতি যাত্রার ট্রেন ফাঁকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১৬, জুন ১০, ২০২৫
ঈদের চতুর্থ দিনেও ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, ফিরতি যাত্রার ট্রেন ফাঁকা

ঢাকা: ঈদের চতুর্থ দিনেও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। স্টেশনে তেমন ভিড় নেই নেই শিডিউল বিপর্যয়।

সব ট্রেনই ছেড়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ে। স্টেশন ছেড়ে যাওয়া এসব অধিকাংশ ট্রেনেই যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তবে ঢাকামুখী ট্রেন বা ফিরতি যাত্রার ট্রেন প্রায় ফাঁকা। এখনও ঢাকায় কম সংখ্যক মানুষ ফিরছেন। সেই তুলনায় বেশি মানুষ ঢাকা ত্যাগ করছেন। ঈদ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ছুটি আরও চারদিন আছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) ঈদের চতুর্থ দিন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের চতুর্থ দিন ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন মানুষ। প্ল্যাটফর্মে অনেক যাত্রী অপেক্ষা করছেন নির্ধারিত ট্রেনের জন্য। ছুটি এখনও চারদিন বাকি আছে। দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় মানুষ ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ছেন। যাওয়ার যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ না থাকলেও প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। যারা যাচ্ছেন তারা ঈদের ভিড় ঠেলে যেতে পারেননি। ফলে এখন স্বচ্ছন্দে যাচ্ছেন।  

অপরদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো কমলাপুরে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাচ্ছে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ট্রেনগুলোতে ফিরছেন মানুষ। তবে ঈদের ছুটি শেষে হবে আগামী শনিবার।  বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ এখনো বন্ধ রয়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এসব কারণে ঈদে গ্রামে ফেরা অনেকেই একটু লম্বা ছুটি কাটিয়ে নগরীতে ফিরছেন। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেনগুলো অনেকটা ফাঁকাই ছিল। ট্রেনগুলো যথা নিয়মেই যাতায়াত করছে। ফিরতি যাত্রীরা বলছেন, ভিড় হওয়ার আগেই ঢাকায় ফিরছেন তারা।

এদিকে সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় যাত্রীরা বেশ খুশি। কথা হয় নেত্রকোনাগামী ট্রেনের যাত্রী মো. মোস্তফা কামাল সঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের অতিরিক্ত ভাড়া এড়াতে আজকের টিকিট কেটেছি। ছুটি তেতু বেশি, তাই আনন্দেও বেশি। দুই জায়গায় ঈদের ছুটি কাটাতে পারছি। আজকেও ট্রেনে যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা সিট পেয়েছি। ট্রেনে এখনও ভিড় কমেনি। ভেবেছিলাম নিরিবিলি বাড়ি যাবো। কিন্তু ছুটি বেশি হওয়াতে এখনও অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। এখন ফিরতি যাত্রায় ভালোভাবে আসতে পারলেই হলো।

সুন্দরবন এক্সপ্রেসের খুলনার যাত্রী সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এবার কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়ছে, এটাই প্রশান্তি। ঈদের ভোগান্তি কমাতে ঈদের পরে বাড়ি যাচ্ছি। আসবো কয়েকদিন পরে।  
এদিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ট্রেনের কর্মচারী কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ফিরতি যাত্রা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। প্রতিদিন মানুষ শুধু ঢাকা ছাড়ছে। আমাদের ট্রেনে গতকালও টিটি ৩৮ হাজার টাকার টিকিট দিয়েছে ট্রেনে। দাঁড়িয়ে যাত্রী যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় বাড়বে। আমাদের ট্রেন সময় মতো ছাড়ছে এবং সময়মতো আসছে।

মোহনগঞ্জ যাবে আকলিমা আক্তার তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ ঢাকাতে করেছি, এখন শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি। ঈদের মধ্যে যাইনি ভিড়ের জন্য। ছেলে মেয়ের তো স্কুল আরও কিছুদিন ছুটি আছে তাই রিলাক্সে যাওয়ার জন্য এখন যাচ্ছি, কিন্তু রিলাক্স কোথায় এখন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের টিকিট আজই নিয়েছি। এখনতো ঈদ শেষে মানুষ ঢাকায় ফিরবে, আর আমি ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। যাতে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়।  

বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরলেন মো. রোকনুজ্জামান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দুই দিন আগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি গিয়েছি। আজ ঢাকায় ফিরলাম। ট্রেন একেবারে ফাঁকা বলা যায়। তেমন কোনো চাপ ছিল না। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী ছিল না। ছুটি শেষ হবে শনিবার তখনতো অনেক চাপ হবে। তাই আগেই ঢাকাতে ফিরলাম। বাসায় দুইদিন রিলাক্সে থাকা যাবে।  

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ঈদে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে। ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৭০টি ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর, বাকিগুলো মেইল কমিউটার। এ কয়দিন কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। গতকার ৯ জুন থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ঈদযাত্রায় স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনের গন্তব্য পর্যন্ত নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টিকেট যাচাইয়ের জন্য ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। ঈদযাত্রা নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উৎসবমুখর করতে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্মসহ সব জায়গায় র‍্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যের পাশাপাশি রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও ছিল।

কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন ম্যানেজার) মো. সাজেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গতকাল থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু আজকে ঈদের চতুর্থ দিনও মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। লম্বা ছুটির জন্য ধীরে ধীরে মানুষ যাচ্ছে। এখন দুপুর বিকেলে আবার ট্রেনের চাপ বাড়বে। ফিরতি যাত্রা পুরো দমে শুরু হয়নি, আগামী শুক্রবার থেকে চাপ বাড়বে। এখনও আসার যাত্রী থেকে যাওয়ার যাত্রী বেশি।  

তিনি বলেন, সকাল থেকেই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন যাচ্ছে এবং ফিরছে। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় ফিরেছে ১৯টির মতো ট্রেন। তবে সব ট্রেনেই বেশিরভাগ আসন ফাঁকা দেখা গেছে। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে ২২টি ট্রেন।

এদিন সকাল থেকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতি, তিস্তা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মহুয়া কমিউটার, কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে এসেছে।  এসব ট্রের বেশির ভাগই ফাঁকা ছিল। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধুর প্রভাতী, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণাসহ ২২ টি ট্রেন কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। সব ট্রেনেই স্ট্যান্ডিং যাত্রী ছিল। এখনও ২৫ শতাংশ যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছে৷ ট্রেনে এবারের ঈদযাত্রা খুবই স্বস্তিদায়ক হয়েছে।

উল্লেখ, রাজধানীতে বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। এবারের কোরবানির ঈদে সরকারি ছুটি থাকবে ১০ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। এবার ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে ঈদুল আযাহার ছুটি শুরু শেষ হবে ১৪ জুন।

জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।