ঢাকা: ঈদুল আজহার পরদিন রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ হকারের উৎপাতে বিরক্ত দর্শনার্থীরা।
কোরবানির দিন ব্যস্ততা শেষে রোববার (৮ জুন) বিনোদনের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ভিড় করেন চিড়িয়াখানায়। সকালে চিড়িয়াখানার মূল ফটক খোলার পর থেকেই দর্শনার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে। এবারের ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় দর্শনার্থীর ভিড় অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এখানে আসেন। বিভিন্ন পশুপাখি দেখা, পরিবার নিয়ে সময় কাটানো এবং ছবি তোলা ছিল দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ।
জাতীয় চিড়িয়াখানা একটি সংরক্ষিত এলাকা হলেও চিড়িয়াখানার পেছনের অংশ জুড়ে হকারের অবাধে বিচরণ। চিড়িয়াখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, পেছনের দেয়াল নিচু। এ দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন হকাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার পেছনের দিকে বিড়ি সিগারেট, পানি ও পানীয়, বিভিন্ন রকম ফল, আইসক্রিম বিক্রি করছেন হকাররা। পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে বলে অধিকাংশ হকারের আচরণও বেপরোয়া। পণ্য দিয়ে বাড়তি দাম না পেলে তারা দর্শনার্থীর সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন।
চিড়িয়াখানার ভেতরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট, আইসক্রিম, খেলনাসহ নানা ধরনের ফল কেটেও হকাররা ফেরি করে বিক্রি করছেন। চিড়িয়াখানার স্টাফ দেখলেই এসব হকাররা পণ্য নিয়ে দৌড়ে চিড়িয়াখানার পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। তারা সবাই সংঘবদ্ধ। একজনের প্রয়োজনে ওপরে এগিয়ে আসেন। প্রয়োজনে দর্শনার্থীর ওপর হামলাও করেন।
মোহাম্মদ রাসেল মানিকগঞ্জ থেকে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। তিনি জানান, চিড়িয়াখানার মধ্যে শতাধিক হকারের আনাগোনা। রয়েছে অস্থায়ী দোকানও। তারা একদিকে যেমন বিরক্ত করে, পরিবেশ নষ্ট করে এবং পণ্যের দামও নিচ্ছেন দ্বিগুণ।
বোতলের পানি দেখিয়ে রাসেল বলেন, দেখছেন এ পানির দাম বাইরে ২০ টাকা। এখানে নেওয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দাম এত বেশি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা হকার সোহাগ বলেন, ভেতরে আমাদের তো পানি বিক্রি করতে দেয় না। গোপনে আসি, বিক্রি করে চলে যাই। নিরাপত্তাকর্মীরা গোপনে টাকা নেয়, না দিলে আমাদের দেখলেই পানির বোতলগুলো কেড়ে নেন। এজন্য বেশি দাম নিচ্ছি।
চিড়িয়াখানায় মো. লাবলু ও সৈকত আম, তালের শাঁস ও কাঠাল বিক্রি করছেন। এসব মৌসুমি ফল চিড়িয়াখানারই বিভিন্ন গাছের। লাভলু জানান, ঠিকাদারের মাধ্যমে চিড়িয়াখানা থেকে এসব ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ফল চিড়িয়াখানার ভেতরেই বিক্রি করার অনুমতি রয়েছে দরপত্রে। সে মোতাবেক গাছ থেকে ফল পেড়ে চিড়িয়াখানার ১০টি স্থানে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিক্রি করছে। এসব দোকানে প্রায় ৪০ জন লোক নিয়োজিত রয়েছে। তবে কোন ঠিকাদার এসব ফল কিনেছেন নাম বলতে রাজি হননি লাভলু।
ছোট মেয়ের আবদারে অস্থায়ী দোকান থেকে দর্শনার্থী আজিজুল হক কিনেছেন ফল। তিনি বলেন, এসব দোকান পরিবেশের ক্ষতি করছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে কোনো দোকান না থাকাই ভালো। যদিও মেয়ের আবদার রক্ষায় আমিও আম কিনেছি।
হকারে বিরক্ত দর্শনার্থী মো. স্বপন বলেন, চিড়িয়াখানায় আগেও এসেছি। কিন্তু এমন বেপরোয়া হকার দেখিনি। হকাররা চিড়িয়াখানার মধ্যে যত্রতত্র চিৎকার করে পণ্য বিক্রি করছেন। পণ্যের দামও দেড় থেকে দুই গুণ বেশি রাখছে।
জসিম নামে আরেক হকার জানান, চিড়িয়াখানার নিরাপত্তাকর্মীকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দিতে হয়। টাকা বা কিছু দিলে বেশি তাড়া করে না। বা নিরাপত্তাকর্মী এদিকে এলে ফোন কলে বলে দেয়, আমরা দৌড়ে অন্যদিকে সরে যাই। নিরাপত্তাকর্মী চলে গেলে আবার আসি।
এ বিষয়ে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. আতিকুর রহমানের বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি ভেতর হকাররা যাতে পণ্য নিয়ে ঢুকতে না পারে। কিন্তু চিড়িয়াখানার দুইপাশে নিচু দেয়াল থাকার কারণে এসব দেয়াল টপকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে হকাররা প্রবেশ করেন। ইচ্ছা করলেও আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। তবে দেয়াল উঁচু করার একটা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে, এটা সম্পন্ন হলে বাইরের হকার প্রবেশ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় পকেট মারের ঘটনা যাতে না ঘটে এ জন্য সাদা পোশাকে ভেতরে নিরাপত্তাকর্মী থাকেন।
জেডএ/আরআইএস