ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ফার্মমুখী হচ্ছেন রাজধানীর ক্রেতারা, বিপাকে প্রান্তিক গরু বিক্রেতারা

দেলোয়ার হোসেন বাদল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৫০, জুন ৫, ২০২৫
ফার্মমুখী হচ্ছেন রাজধানীর ক্রেতারা, বিপাকে প্রান্তিক গরু বিক্রেতারা ছবি: ডি এইচ বাদল

কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসে, ততই জমে ওঠে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পশুর হাট। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই হাটগুলোর চিত্র আস্তে আস্তে বদলে যেতে শুরু করেছে।

স্থানীয় খামারের (ফার্ম) গরু এখন বাজারে এমন প্রভাব বিস্তার করছে, যাতে গেরস্থ গোয়ালের গরু বিক্রেতারা পড়ছেন চাপে, বলা যায় অনেকটা জিম্মি অবস্থায়।

ঈদের আগেই শহরের বড় বড় জায়গায় ফার্মের গরু তুলে ধরা হয় বিজ্ঞাপনে, বিলবোর্ডে,ফেসবুকে, অনলাইন মার্কেটিং ও হোম ডেলিভারির সুবিধা দিয়ে। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা হাটমুখি না হয়ে সরাসরি খামারের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন।

রাজধানীর শ্মশান ঘাট, পোস্তগোলা, শনির আখড়া ও কমলাপুর এলাকার হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়,দেশের দূর-দূরান্ত থেকে গরু নিয়ে এসেছে  সাধারণ গরু বিক্রেতারা। কিন্তু তারা মনে মনে হতাশ, তাদের গরুগুলো কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারবেন কি না তানিয়ে আছে শঙ্কায়। অনেকেই বলছেন, ফার্মের গরুর দাম কম, লোভনীয় ও আকর্ষণীয় প্যাকেজে বিক্রি হয়। ফলে হাটে তাদের পশুগুলোকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না ঢাকার ক্রেতারা, অনেক সময় দরদামও করেন না। বেশির ভাগ ক্রেতাদের বলতে শুনি , ভালো দামের গরু না পেলে ফার্মে গিয়ে দেখে বুঝে  নিয়া আসবো।  

কুষ্টিয়া থেকে প্রতিবছর হাসনাবাদ কোরবানির গরুর হাটে  ১০/১৫টি গরু নিয়ে আসেন মামুন। গত বছরও ভালে দাম না পেয়ে ৬টি গরু ফেরত নিয়ে গেছেন। এবার ও এসেছেন ১০টি গরু নিয়ে। কথা হয় বাংলানিউজের সাথে, তিনি বলেন,আজ ২দিন হলো মাত্র একটি গরু বিক্রি করেছি। ক্রেতাদের তেমন সাড়া নেই। সারা বছর গরুগুলোকে লালল পালন করি, কোরবানির হাটে বিক্রি করবো এই আশায়।  কিন্তু সবাই ঝুঁকে পড়ছে ফার্মের গরুর উপর। কারণ তাদের চটকদার বিজ্ঞাপন আর ফেসবুকে লোভনীয় অফার দেখে মানুষ আর কষ্ট করে গরুর হাটে আসতে চায় না।  

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিছুটা বেশি টাকা পাওয়ার আশায় কোরবানির পশু নিয়ে রাজধানীর হাটে আসেন খামারবিহীন ছোট-বড় গরু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু  তাদের পশু গুলো তেমন ভাবে বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ বছরের পর বছর ধরে এটাই তাদের প্রধান আয়-রোজগারের উৎস।

কিছু হাট ব্যবসায়ির অভিযোগ, খামারিরা কোরবানির মৌসুমকে এক প্রকার ব্যবসায়িক ‘মৌসুম’ বানিয়ে ফেলেছে। তারা আগে থেকেই বাজার বুঝে, গরু তুলে রাখে। এতে হাটে দাম পড়ে যায়। গরু নিয়ে আসা ঢাকার বাইরের ব্যাপারীদের বিপাকে পড়তে হয়।

অন্যদিকে, ফার্মের গরু বিক্রেতারা বলছেন, আমরা নিয়মিত ভালো খাবার দিয়ে, যত্ন দিয়ে পরিচর্যা করি। ফলে আমাদের ফার্মের গরু গুলো দেখতে সুন্দর ও নাদুসনুদুস হয়। এজন্য খরচও বেশি হয়। সেক্ষেত্রে দাম একটু বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে বাজার যাচাই করেই আমরা দাম নির্ধারণ করি।

কোরবানি গরুর ক্রেতারা বলেন, ফার্মের গরুর দামের তুলনায় হাটের গরু দামের যে বৈষম্য তা সমন্বয় না হলে ভবিষ্যতে হাটের গরু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে হারিয়েও যেতে পারে।

সরকারি পর্যায়ে পশু পরিবহনের সুযোগ, প্রশিক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না গেলে কোরবানির গরুর বিকিকিনি হয়তো একসময় পুরোপুরি ফার্ম নির্ভর হয়ে পড়বে। যা প্রান্তিক পশু পালকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে হুমকিস্বরূপ।

কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র ২ দিন। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে এবার হাট বসছে মোট ২১টি।

ভালো দাম পাবার আশায় আগে ভাগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু নিয়ে এসেছন ব্যাপারীরা। বৈরী আবহাওয়ায় কিছুটা বাধা পড়লেও এরি মধ্যে রাজধানীর বেশিরভাগ হাটেই পশু বিকিকিনি শুরু হয়েছে। রোদ-বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে হাটগুলোতে ত্রিপল টাঙানো হয়েছে। পাশাপাশি খামারিদের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

ডিএইচবাদল/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।