সোলায়মান সেলিম নামে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকার এক ব্যক্তি দাবি করছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে তিনি মারা গেছেন দেখিয়ে হত্যা মামলা করা হয়েছে। তদন্তের জন্য পুলিশ তার ঠিকানায় গেলে সেলিম নিজের ‘ভুয়া মৃত্যু’ ও হত্যা মামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন।
জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কা থেকে স্থানীয় থানায় সম্প্রতি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সেলিম। খবর বিবিসি বাংলার।
গত ৩ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করা হয়। ওই মামলার বাদী সেলিমের আপন বড় ভাই।
এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এছাড়া তার সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান কামাল, এমপি শামীম ওসমানসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে এতে আসামি করা হয়েছে।
এ হত্যা মামলার প্রাথমিক তদন্ত করেছে যাত্রাবাড়ী ও ফুলবাড়িয়া থানা। বর্তমানে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তাধীন।
দুই থানা ও ডিবির তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদী এই মুহূর্তে পলাতক আছেন। এছাড়া সেলিমের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত করতে ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
মামলায় সাক্ষী হিসেবে যুক্ত আরও দুজনের নামও সেলিমের আপন দুই নামের সঙ্গে সঙ্গে মিল আছে। ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আদালতের অনুমতি নেওয়া হয়েছে, এখন সেলিমের সঙ্গে সাক্ষীর ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
ফুলবাড়িয়ার ধামোর এলাকায় নিজের বাড়িতে বেস সেলিম জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তার সন্দেহ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ভাই সাজানো হত্যা মামলা দিয়ে থাকতে পারেন।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া থানায় হাজির হয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তার নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিমের হত্যা মামলা এবং থানায় গিয়ে তার শঙ্কা প্রকাশের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।
এ হত্যা মামলার বাদীর পাশাপাশি যে দুজন সাক্ষী তারাও সেলিমের আপন ভাই বলে উল্লেখ করে তিনি। তিন ভাইয়ের সঙ্গে সেলিমের জমিজমা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকার কথাও জানান সেলিম।
সোলায়মান সেলিম বলেন, ‘জীবিত থাকতে যদি কেউ মৃত দেখায়, তার চেয়ে দুঃখ আর কী হতে পারে? আমার ভাইয়েরাই দেখাইছে আমি নাকি মারা গেছি। ’
সোলায়মান সেলিম জানান, তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচবার ঢাকায় গিয়ে আদালত, থানা ও ডিবি কার্যালয়ে হাজির হয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করেছেন। কিন্তু মামলাটি তাকে আতঙ্কে রেখেছে।
জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থানকালে নিরাপত্তা বাহিনী ও শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হামলাসহ সংঘাতে ১৪শ’রও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, আন্দোলন দমনে এসব নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন পলাতক শেখ হাসিনা।
পুলিশ সদরদপ্তরের সূত্র অনুসারে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬শ হত্যা মামলা। এসব মামলা তদন্তে মনিটরিং কমিটি করার কথাও জানিয়েছিল পুলিশ।
এইচএ