সাতক্ষীরা: কোমলমতি শিশুদের প্রথম পাঠের স্থান প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সীমানা ঘেঁষেই দাউ দাউ করে জ্বলছে প্লাস্টিকের জুতা ও রাবার। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে এলজিইডির সড়ক নির্মাণের সামগ্রী প্রস্তুত করতে পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার। সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের পাশে ২-৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী এই অপকর্ম।
সরেজমিনে শ্যামনগর পৌরসভার সোয়ালিয়া এলাকায় গেলে এই ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে।
১৫ নম্বর সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির চারপাশে হাজার হাজার মানুষের আবাসস্থল। অথচ, এমন একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট এবং সর্বোপরি প্রভাব পড়ছে আশপাশের কৃষি জমির ওপর।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন শ্যামনগর উপজেলার এলজিইডির বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানোর জ্বালানি হিসেবে তুষ ও কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করছে পুরাতন জুতা, পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ নানা রকমের ভাঙারি দ্রব্য। প্রভাবশালী ঠিকাদাররা পরিবেশ-গাছপালা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির তোয়াক্কা না করে এসব পোড়াচ্ছে। নষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য পোড়ার গন্ধে এলাকার পরিবেশ ও জনজীবন বিষিয়ে উঠেছে।
সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টির কাছেই রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানোর জ্বালানি হিসেবে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিদ্যালয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষক ও শিশুরা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকের চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোমলমতি শিশুরা ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাদের চোখ জ্বালাসহ শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের এই বিদ্যালয়ে আর পাঠাতে চাচ্ছেন না। এছাড়াও বিদ্যালয়ের লোহার আসবাবপত্র, গ্রিলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের মালিক নুরুল হক মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে আমার কাজ হচ্ছে না, হচ্ছে জাকাউল্লাহ সাহেবের কাজ।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লা অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান মো. জাকাউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
এমজে