ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ‘সোর্ড অব অনার’ বৈমানিক জাওয়াদ চিরসমাহিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ‘সোর্ড অব অনার’ বৈমানিক জাওয়াদ চিরসমাহিত গার্ড অব অনার শেষে দাফন করা হয় স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে (ইনসেটে)। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারানো স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে মানিকগঞ্জ শহরের সেওতা কবরস্থানে চিরসমাহিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (১০ মে) বিকেল ৩টার দিকে ‘সোর্ড অব অনার’ সম্মাননাপ্রাপ্ত জাওয়াদকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে দাফন করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন তার বাবা ডা. মো. আমান উল্লাহসহ আত্মীয়-স্বজন এবং বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাসহ হাজারো মানুষ।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জাওয়াদের মরদেহ বহনকারী বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। হেলিকপ্টার থেকে তার মরদেহের কফিন কাঁধে করে নামিয়ে আনেন জাওয়াদের সহকর্মী বিমান বাহিনীর সদস্যরা। ছেলের মরদেহবাহী কফিন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নীলুফা আক্তার খানমসহ তার স্বজনরা। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ। জুমার নামাজের পর ওই স্টেডিয়াম মাঠে জাওয়াদের তৃতীয় জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সেওতা কবরস্থানে।

তারও আগে ঢাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে বৈমানিক জাওয়াদের ‘ফিউনারেল প্যারেড’ এবং দ্বিতীয় জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। সেখানে তার মরদেহে দেওয়া হয় ‘গার্ড অব অনার’।

বৈমানিক জাওয়াদের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয় চট্টগ্রামের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকের প্যারেড গ্রাউন্ডে।

গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের অদূরে কর্ণফুলী নদীতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ।

এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার পর বৈমানিকদ্বয় উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। দুইজন বৈমানিককে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেওয়া হয়। চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আইএসপিআর থেকে বলা হয়, বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিকদ্বয় অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে সেটিকে বিমানবন্দরের নিকট ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় (নদীতে) নিয়ে যেতে সক্ষম হন।

পেশাগত দক্ষতায় জাওয়াদ পেয়েছিলেন নানা পুরস্কার-সম্মাননা
স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোপালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ডা. মো. আমান উল্লাহ এবং মায়ের নাম নীলুফা আক্তার খানম।

তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ থেকে বিএসসি (অ্যারো) পাশ করেন।

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরের বছরের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। চাকরিকালে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এছাড়া ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘Chief of Air Staff’s Trophy for Best in Flying (Indian Air Force)’  অর্জন করেন।

চাকরিকালে তিনি দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশ নিয়ে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে অ্যাভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন অ্যাভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন।

তার কমিশনপ্রাপ্তির পর চাকরিকাল ১২ বছর ০৫ মাস ০৯ দিন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ১ মাস ২০ দিন। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আরও পড়ুন
** মানিকগঞ্জে পৌঁছেছে পাইলট জাওয়াদের মরদেহ
** আগুন ধরতেই বিমানটি সরিয়ে নদীতে নিয়ে যান দুই বৈমানিক
** বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমান উদ্ধার
** বৈমানিক জাওয়াদের বাড়িতে শোকের মাতম, বাকরুদ্ধ মা
** প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এক পাইলটের মৃত্যু
** প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, ২ পাইলট নামলেন প্যারাসুটে

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।