ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিপণের আশায় স্কুলছাত্র হিমেলকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে সহপাঠীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
মুক্তিপণের আশায় স্কুলছাত্র হিমেলকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে সহপাঠীরা

নাটোর: ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ভাগ বাটোয়ারা করার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল নিহত স্কুলছাত্র মো. হিমেল হোসেনের (১৫) সহপাঠীদের।  

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা হিমেলকে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ও পরিত্যক্ত ভবনে আটকে ফেলে।

এসময় বিষয়টি বুঝতে পেরে হিমেল চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে। এ অবস্থায় জানাজানির ভয়ে তারা হিমেলের মাথায় ধারালো ‘দা’(দেশীয় অস্ত্র) দিয়ে আঘাত করে। এতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হিমেল।

পরে দিনগত রাতে হাত-পা বেঁধে মুখে পলিথিন ঢুকিয়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে হিমেলকে হত্যার পর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই ভুট্রা ক্ষেতে মরদেহ রেখে পালিয়ে যায় তার সহপাঠীরা। এতে মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আর সহপাঠীদের হাতে অকালে প্রাণ হায় স্কুলছাত্র হিমেল।

এই হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টা পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিহত হিমেলের সহপাঠি সজল সাহা পার্থ, মো. মেহেদি হাসান, শরিফুল ইসলাম সুজন ও মো. শিমুল ইসলামকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে এ ঘটনার বর্ণনা দেয়।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এটি এম মাইনুল ইসলাম।  

এসময় উপস্থিত ছিলেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন লেনি, ডিআইও-১ জালাল উদ্দিন ও নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনোয়ারুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দিনগত রাতে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ও পরিত্যক্ত ভবনের ভেতর এ হত্যার ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। অপরদিকে এ ঘটনায় আটক চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাতে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

নিহত হিমেল উপজেলার পিপরুল (সেন্টার) গ্রামের মো. ফারুক সরদারের ছেলে। সে পাটুল-হাঁপানিয়া স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। আটকরা একই এলাকার বাসিন্দা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে সজল সাহা পার্থ নামে সহপাঠী এক বন্ধু মোবাইল ফোনে কল করে হিমেলকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ও পরিত্যক্ত ভবনে ডেকে নেয়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার স্বজনরা। পরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুজি শুরু করেন।

কিন্তু কোথাও তার সন্ধান না পেয়ে পরে তারা থানা পুলিশকে জানান। এ অবস্থায় নিখোঁজ হিমেলকে উদ্ধারে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। পরে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হিমেলের বন্ধু পার্থকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ও পরিত্যক্ত ভবনে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হিমেলের অপর বন্ধু মেহেদীসহ শিমুল ও সুজন নামে আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ঘটনা বেড়িয়ে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, হিমেলের বাবার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ই ছিল তাদের মূল পরিকল্পনা। আর তাই তার সহপাঠী পার্থকে দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হিমেলকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ও পরিত্যক্ত ভবনে আটকে রাখে। এ অবস্থায় হিমেল চিৎকার দিলে বিষয়টি জানাজানির ভয়ে শিমুল দা দিয়ে হিমেলের মাথায় আঘাত করে। এতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হিমেল। পরে রাতে মেহেদি তার হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং বাহিরে পাহারা দেয়। আর শিমুল, সুজন ও পার্থ ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত ও মুখে পলিথিন ঢুকিয়ে হিমেলকে হত্যা করে ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই ভুট্টা ক্ষেতে মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে তারা।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনোয়ারুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিক তদন্তে নিহত হিমেলের মাথায় আঘাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে মাথায় আঘাত ও চাকু দিয়ে খুচিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া তার মুখের ভেতর পলিথিন কাগজ ঢোকানো ছিল।

ওসি বলেন, এ ব্যাপারে নিহতের বাবা বাদী হয়ে চারজনকে অভিযুক্ত করে নলডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে বিচার প্রার্থী ন্যায় বিচার পান।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এটি এম মাইনুল ইসলাম, পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কলিমুদ্দিনসহ আরও অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।