ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক যেন ‘মরণ ফাঁদ’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৪
সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক যেন ‘মরণ ফাঁদ’

সিলেট: চোরাচালান পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে মরণ ফাঁদে পরিণত সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। বছরের শুরু থেকে আড়াই মাসে ঝরেছে ১৬ প্রাণ।

 

কেবল চলতি মার্চেই ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে এই সড়কে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরও ১২ জন।  

গত আড়াই মাসে এই সড়ক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে কেবল চোরাই পণ্যবাহী ডিআই ট্রাক ও পিকআপের বেপরোয়া গতির কারণে।  ভারত সীমান্ত থেকে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চোরাই পণ্য। চোরাচালানিরা ভারতীয় চিনি, চা পাতা, পেঁয়াজ, প্রসাধনী সামগ্রী, গরু-মহিষ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক দিয়ে শহরে নিয়ে আসেন।  

চোরাই পণ্য নিরাপদে আনতে অবৈধ পণ্যবাহী এসব যানবাহন চলে বেপরোয়া গতিতে। এ কারণে দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে।  

সর্বশেষ সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে বেপরোয়া পিকআপভ্যানের সংঘর্ষ হয় একটি যাত্রীবাহী লেগুনার। এতে একই পরিবারের ৩জনসহ লেগুনার ছয় যাত্রী নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও চারজন।  

ছয় মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে চোরাইপণ্য বহনকারী যানবাহনের বেপরোয়া গতির বিষয়টি সামনে আসে।

মঙ্গলবার এই ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে জনতা। চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর রাতেই আরেক পথচারীকে পিষ্ট করলো একটি ডিআই ট্রাক।  

মাত্র ৩২ ঘণ্টার ব্যবধানে সড়কটিতে প্রাণ ঝরলো সাতজনের।

এরআগে গত ১৯ জানুয়ারি সিলেট-তামাবিল সড়কে ৪ নম্বর বাংলাবাজার ব্রিজের পাশে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে চার আরোহী নিহত হন। নিহত চারজনই উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।

নিহতরা হলেন- উপজেলার নিজপাট লামাপাড়া গ্রামের জহুরুল মিয়ার ছেলে জুবায়ের আহসান (২৬), নিজপাট তোয়াসীহাটি গ্রামের রনদিপ পালের ছেলে নিহাল পাল (২৫), নিজপাট পানিহারাহাটি গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হোসেন তমাল (২৪) এবং নিজপাট জাঙ্গালহাটি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ (২৫)। তারা জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন।

গত ৫ মার্চ জৈন্তাপুরে জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুলের সামনে বেপরোয়া ডিআই ট্রাক ৩টি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ৩ আরোহী নিহত হন। আহত হন আরও ৪ জন।

নিহতরা হলেন - উপজেলার মোকামবাড়ী এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে শিহাব, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলীর ছেলে ফয়সাল রেজা ও মোকামবাড়ী এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে পাবেল।

গত ৮ মার্চ শুক্রবার (০৮ মার্চ) পর্যটকবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পরশ নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ওই সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার সারীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্ঘটনায় ঘটে।

এরআগে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮ টা থেকে ৯ টায় মধ্যে ওই সড়কে পৃথক ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জন আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, সিলেট তামাবিল রাস্তার বাঘের সড়ক চিনিবোঝাই ডিআই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দোকানে প্রবেশ করে, এতে গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব আলীরগাও নয়ামাটি গ্রামের মৃত মাসুক উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০) এবং একই ইউনিয়নের লামাকুটা পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আলী আমজাদ (৩২) আহত হন।

এরপর উপজেলার চিকনাগুল সিলেট গ্যাস ফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ডিআই পিকআপের সঙ্গে সিলেটগামী মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে দুই ভাই বোন আহত হন।

তারা হলেন - উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের কহাইগড় গ্রামের আজির উদ্দিনের ছেলে মারুফ আহমেদ (২২) তাসনিমা বেগম (২৩)।  
এছাড়া জৈন্তিয়া গেইট ঘাটেরচটি আইসক্রিম ফ্যাক্টরি সামনে সিলেটগামী মোটরসাইকেল এক পথচারীকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে ৩ জন গুরুত্ব আহত হন।

গত ১ জানুয়ারি ওই সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার সারীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ডিআই ট্রাকের ধাক্কায় ইব্রাহিম আলী (২৮) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলে মারা যান।  

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন অপর আরোহী উপজেলার খারুবিল গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম।

এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হলেও প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, সিলেট দুই দিনে সাত প্রাণহানির ঘটনায় মঙ্গলবার সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করেছে জনতা।  

মহাসড়কটিতে নিরাপত্তা ও নিরাপদ ইস্যুতে অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তারা দাবি তোলেন, অবৈধ যানবাহন তল্লাশি, চেকপোস্ট বসিয়ে টাস্কফোর্স-মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনার।

অবরোধকারীদের মধ্যে স্থানীয় নেতারা বলেন, সিলেট তামাবিল মহাসড়কে অবৈধ পণ্যবাহী যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চালানোয় প্রাণ সংহারের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ওই সড়কে ভারতীয় গরু-মহিষ, চিনি, চা পাতা, মাদকদ্রব্য, পেঁয়াজ,কসমেটিক্স, মোটরসাইকেল, মোবাইলফোন, টাটা গাড়ির যন্ত্রাংশ, সার্জিকাল (অপারেশনের) সামগ্রী, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই করে ডিআই-পিকআপে বেপরোয়া গতিতে বহন করে আসছে, যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে দাবি করেন তারা।

সড়কটিতে সবরকম ছোট-বড় যানবাহন এবং চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশি করতে নিয়মিত যানবাহন চিহ্নিত কাজে টাস্কফোর্স ও মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবি মনে করেন বক্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৪
এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।