ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হঠাৎ মেসেজ আসে, ‘আব্বু আমাকে মাফ করে দিয়েন’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
হঠাৎ মেসেজ আসে, ‘আব্বু আমাকে মাফ করে দিয়েন’ সোমালিয়ান দস্যুদের হাতে বন্দি নাবিক তারেকুল ইসলামের বাবা-মা, ইনসেটে তারেকুল

ফরিদপুর: ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ জন বাংলাদেশির মধ্যে অন্যতম নাবিক তারেকুলের ইসলাম।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকড়িকান্দি গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে তিনি।

 

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে তারেকুলের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে এসময় সন্তানকে ফিরে পেতে সবার সহায়তা কামনা করেন তিনি।  

মো. দেলোয়ার হোসেন জানান,  ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা হতো তারেকুলের সঙ্গে। হঠাৎ করেই ছেলের মেসেজ আসে ‘আব্বু আমাকে মাফ করে দিয়েন’। এরপর থেকে শুরু হওয়া দুশ্চিন্তা আর কাটছেই না।

তিনি বলেন, এরপর বড় ছেলের কাছে জানতে পারি তারেকুলের জাহাজে জলদস্যুরা আটকে ফেলেছে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। আজ সকালে একটা ম্যাসেজ দিয়েছে একটি ক্যানেলের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। আর কোনো যোগাযোগ করতে পারি নাই।

তিনি আরও বলেন, জাহাজ কোম্পানির সাথে কথা হয়েছে, তারা এখনও কিছু বলতে পারছে না। সুস্থভাবে ছেলেকে ফিরে পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তারেকুলের মা হাসিনা বেগমের কান্না থামছেই না। ছেলের ছবি দেখে কান্না করছেন আর তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করছেন।

হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তারেকুল খুবই নম্র এবং ভদ্র একটি ছেলে। সাত বছর বয়স থেকে কখনো নামাজ-রোজা কামাই করেনি তারেক।  

এই বিষয়ে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মিয়া জানান, আমরা পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে আসছি। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই নাবিক তারেকুল ইসলামসহ সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারেকুলের পরিবারের সঙ্গে আমি মোবাইলফোনে কথা বলেছি। এছাড়া মধুখালী ইউএনওকেও ওই বাড়িতে যেতে বলা হয়েছে। নিবিড়ভাবে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘তারেকুলের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাহাজ মালিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি, তারেকুলসহ অন্য সকল জিম্মি নাবিকগণ অতি শিগগিরই উদ্ধার হবেন। ’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো. তারেকুল ইসলাম। ছকড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিতে যোগ দেন।

সবশেষে গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে।  

২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে করেন নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের মেয়ে তৎকালীন মেডিক্যালের ছাত্রী মোসাম্মৎ তানজিয়া। বিবাহিত তারেকুল-তানজিয়া দম্পতির এক বছর এক মাস বয়সী একটি মেয়ে আছে। বর্তমানে তারেকুলের স্ত্রী ও সন্তান তার বাবার বাড়িতে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।