ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভুল বুঝে ফিরতে চাইলেও বাধা দেন সঙ্গীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
ভুল বুঝে ফিরতে চাইলেও বাধা দেন সঙ্গীরা আটক চারজনের মধ্যে তিনজন

ঢাকা: নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়েন চারজন। কথিত হিজরতের নামে পাহাড়ে প্রশিক্ষণে গিয়ে বুঝতে পারেন, তারা ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন।

একাধিকবার ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ফিরতে চাইলেও বাধা দেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য ও অন্য সঙ্গীরা। পালাতে চাইলে তাদের জোরপূর্বক আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন।

অবশেষে ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হলেও এই চারজন বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। পরিবারের আহ্বান আর আইনি সহায়তা পাওয়ার আশায় নিজেরাই ধরা দেন র‍্যাবের কাছে।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাতে নতুন জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব-১১ কার্যালয়ে এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এরপর র‍্যাব-১১ থেকে র‍্যাব সদরদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে ওই চারজনের পরিচয় পর্যালোচনা করে র‍্যাব নিশ্চিত হয় ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের তালিকায় তারা রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ।

পরে র‍্যাব যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আটক করে।

নতুন জঙ্গি সংগঠনের ওই চার সদস্য হলেন- আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬), মো. হাসান সাইদ (২৬), শেখ আহমেদ মামুন (২৩) ও মো. ইয়াছিন (২১)।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, এই চারজন বিভিন্ন সময়ে তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। পরে কথিত হিজরতের কথা বলে বা চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

পাহাড়ে কেএনএফের সহযোগিতায় সংগঠনটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও চিন্তাভাবনা দেখে তাদের ভুল ভাঙে। পরবর্তী সময়ে এই চারজনসহ আরও কয়েকজন সদস্য সমতলে ফিরতে চাইলেও পারেননি। উল্টো তাদের বন্দি রেখে নির্মম নির্যাতন করা হয়।

ধরা পড়ার পর তাদের দিয়ে জোরপূর্বক রশদ পরিবহন, রান্নাবান্না, প্রশিক্ষণের গর্ত করা, ঘর বানানোসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হতো উল্লেখ করে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা ২০২২ সালের জুন মাসে সিপ্পি পাহাড় থেকে পালিয়ে রনি পাড়া এসে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছিলেন। এমন সময় কেএনএফ সদস্যদের কাছে ধরা পড়েন। তাদের আটকে রেখে পুনরায় নির্যাতন করা হয়। তারা আবারও পালানোর চেষ্টা করলে তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

পাহাড়ে র‍্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে তারা অন্য সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গত মার্চের প্রথম দিকে পালাতে সক্ষম হন। প্রথমে তারা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন।

বিভিন্ন সময়ে র‍্যাবের কাছে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ ও ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের আইনি সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। এ ছাড়া পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবারের পক্ষ থেকেও তাদের র‍্যাবের কাছে যেতে উৎসাহ দেওয়া হয়। অবশেষে তারা আইনি সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ও নির্ভরযোগ্যতার স্থান থেকে র‍্যাব কার্যালয়ে হাজির হন।

মার্চে পালিয়ে এলেও তারা এতদিন কেন আত্মসমর্পণ করেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা অন্যদের সঙ্গে পালিয়ে আসেন। তাই চাইলেও তারা গ্রুপ থেকে একেবারে মুক্ত হতে পারছিলেন না। বাকিরা আটকের পর তারা ফ্রি হন এবং বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, আবু বক্কর নারায়ণগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলেন। ২০২১ সালে তার গৃহশিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনে যোগ দেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১২ জনের দলের সঙ্গে তৃতীয় ব্যাচে পাহাড়ে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে যান। পাহাড়ে গিয়ে তিনি ভুল বুঝতে পারেন। বাড়িতে ফেরার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা তাকে যোগাযোগ করতে দেননি।

তার মা আম্বিয়া এর আগে র‍্যাবের সহায়তায় গণমাধ্যমের সহযোগিতায় তাকে দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ, বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা ও অন্যায় কাজে শামিল না হতে অনুরোধ করে স্বাভাবিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তার মা সাবেক কেবিন ক্রু আম্বিয়াও সন্তানের শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে র‍্যাবের সহায়তায় ভুল বুঝতে পেরে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

আর হাসান সাঈদ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে। ২০২১ সালে সুরা সদস্য মায়মুনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগ দেন। পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে সুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে পাহাড়ে যান। পাহাড়ে যাওয়ার পর ভুল বুঝতে পারেন এবং সাঈদসহ চার-পাঁচ জন দুবার পালাতে চাইলেও তারা ধরা পড়েন।  

শেখ আহমেদ মামুন সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ২০২১ সালে তিনি সাঈদের মাধ্যমে নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে সাঈদসহ কয়েকজন মিলে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে যান। তিনিও দুবার পাহাড় থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের স্বীকার হন।

মো ইয়াসিন ঘড়ি মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০২১ সালে তিনি সিরাজের মাধ্যমে সংগঠনে যোগ দেন এবং নভেম্বরে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে যান। পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেখে তিনি ভুল বুঝতে পেরে সমতলে ফিরে আসেন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
পিএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।