ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফাঁসির আগে স্ত্রী-ভাইদের যা বললেন তাহের হত্যা মামলার আসামি মহিউদ্দিন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
ফাঁসির আগে স্ত্রী-ভাইদের যা বললেন তাহের হত্যা মামলার আসামি মহিউদ্দিন নিহত অধ্যাপক তাহের। ফাইল ছবি

ফরিদপুর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া. মো. মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হবে আজ রাত ১০টায়।

এ রায়ে হতাশ ড. মহিউদ্দিনের পরিবার, স্বজন ও তার গ্রামের বাসিন্দারা।

কারণ, মামলার ৪ নম্বর আসামি ড. মহিউদ্দিন। অথচ এক থেকে তিন নম্বর আসামি খালাস পেয়েছেন।

এদিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পরকালে বিচার পাবেন বলে জানিয়েছেন ফাঁসির আসামি ড. মহিউদ্দিন।   একই দাবি তার স্ত্রী ও দুই ভাইয়ের।

আসামি ড. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে।  সেই বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছাড়াও তার চাচাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন।  

সেখানে গেলে ড. মহিউদ্দিনের চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, গত ২৫ জুলাই রাজশাহী জেলা কারাগারে মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিবারের ৫ সদস্য শেষ দেখা করেছেন। সেখানে মহিউদ্দিনের স্ত্রী, তার ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া ও ছিকু মিয়া ছিলেন।

স্ত্রী-ভাইদের দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন ড. মহিউদ্দিন।

শেষ কথা কি হয়েছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে ছিকু মিয়া বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজশাহী জেলা কারাগারে ভাই ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিবারের লোকজনসহ শেষ দেখা করি। কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো আমরা সেখানে পরিবারের ৫ সদস্য দেখা করি।  কারাগারের ভেতর থেকে ভাইদের ড. মহিউদ্দিন বলেন— ‘অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাবা সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে গড়ে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তার বাজার করে দিতাম।  তার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি ন্যায়বিচার পেলাম না। আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম। আমাকে বাবার কবরের পাশে দাফন করো। ’

এসময় ড. মহিউদ্দিন তার স্ত্রীকে বলেন— ‘যেহেতু দেশে আমি ন্যায়বিচার পেলাম না, সেহেতু তুমি জায়গাজমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাও। ’

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু বলেন, আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন বিধায় মামলা সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব দেননি। তিনি (মহিউদ্দিন) বলেছিলেন, ‘অন্যায় করিনি। ইনশাআল্লাহ খালাস পাব। ’ কিন্তু রোষানলে পড়ে আমার ভাইয়ের ফাঁসি হলো। আমরা ভাইয়ের বিচার পরকালে পাব।

উল্লেখ্য, ইয়াফি ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ড. মহিউদ্দিন মিয়া। তার বাবা মৃত আব্দুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন।  

১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন মহিউদ্দিন। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্ত দুজন হলেন—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন—অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।

ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন—নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।

১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম এবং যাবজ্জীবন দণ্ডিত সালাম রিভিউ আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের ওপর শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর রায় হয় ২ মার্চ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।