ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক নাদিম হত্যা

মাস্টারমাইন্ড হলেও চাপ দিয়ে ‘মামলামুক্ত’ শাহিনা

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
মাস্টারমাইন্ড হলেও চাপ দিয়ে ‘মামলামুক্ত’ শাহিনা

জামালপুর থেকে ফিরে: বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু যদি প্ল্যানমেকার হয়ে থাকেন, মাস্টারমাইন্ড অন্য কেউ। প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, উঠে আসছে একটিই নাম, সেটি বকশীগঞ্জের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের।

গত ১৪ জুন হামলার শিকার নাদিমের মৃত্যু হয় ১৫ জুন দুপুরে। গত ১৭ জুন তার স্ত্রী মনিরা বেগম চেয়ারম্যান বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার দ্বিতীয় আসামি বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। মামলার প্রেক্ষিতে বাবুসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু এখনও ‘মামলামুক্ত’ শাহিনা বেগম।

কেনো, কী কারণে শাহিনা বেগমের নামে মামলা হয়নি, সেটি অনেক বড় প্রশ্ন। কিন্তু তিনি কেনো নাদিম হত্যার মাস্টারমাইন্ড, তা জানা গেছে নাদিমের স্বজন ও স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের কাছ থেকে। উল্লেখ্য, স্থানীয় অনেক বাসিন্দা শাহিনা বেগমের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। অনেকে আবার অকপটে এ ঘটনায় তার জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন।

তারা দাবি করেন, নাদিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শাহিনা বেগমই ঘটিয়েছেন। কারণ, তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন নাদিম। সেই সংবাদের পর গত এপ্রিলে নাদিমের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় নাদিম অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগে ছিল শাহিনা বেগমের নাম।

নিহতের মেয়ে রাব্বিরাতুল জান্নাতও তার বাবার হত্যাকারী হিসেবে শাহিনা বেগমের নাম বলেছেন। তিনি বলেন, শাহিনা বেগমের নির্দেশে আমার বাবার ওপর হামলা করেন বাবু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

সাংবাদিক নাদিমের ওপর শাহিনা বেগমের ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ হিসেবে জান্নাত বলেন, উনি রাজাকারের মেয়ে। তাকে নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশের পর মধ্য বাজারে আমার বাবার ওপরে হামলা করা হয়। এতে বোঝাই যে যে, কে এবং কেনো হামলা হয়েছে। ওই হামলার বিচার পাইনি, নিরাপত্তা পাইনি। আগের ঘটনার যথাযথভাবে বিচার হলে, বাবাকে এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না।

রাব্বিরাতুল জান্নাত সরাসরি শাহিনা বেগমের নামে অভিযগের আঙুল তুললেও, তার ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন সেটি না করে বলেছেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে যাচ্ছি যে, এ হত্যাকাণ্ডের একজন মাস্টারমাইন্ড রয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা তার নাম বলতে পারছি না। পুলিশের এসব অনুসন্ধান করা দরকার।

মেয়ে সরাসরি এবং ছেলে ইঙ্গিতে বললেও, শাহিনা বেগমের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। শাহিনা বেগমের বিষয়ে একটি কথা না বললেও, স্বামী হত্যার বিচার চান মনিরা বেগম। ঘটনার নেপথ্যে যারাই জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মূলত শাহিনা-নাদিম দ্বন্দ্ব শুরু হয় গত এপ্রিলে। যার দরুন নাদিম হামলার শিকার হন গত ১১ এপ্রিল। এ সময় গুরুতর আহত হন তিনি। মামলাও করেন শাহিনা বেগম, স্বপন মণ্ডল ও খন্দকার শামীমসহ কয়েকজনের নামে।

স্থানীয়দের অনেকের দাবি, বকশীগঞ্জ শহর থেকে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের দূরত্ব অনেকখানি। তাই কোনো শেল্টার ছাড়াই নাদিমের হত্যাকাণ্ড হয়নি। আর এ কথাটি ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। অন্তত কাউকে তার বাড়ির কাছাকাছি এভাবে রাস্তায়, সবার সামনে মেরে ফেলা হতো না। বাবু চেয়ারম্যানকে শাহিনা বেগমেই শেল্টার দেন। তাছাড়া নিজে উপস্থিত থেকে নাদিমকে খুন করানো- এতো সাহস বাবু পাবেন না।

এ হত্যা মিশনে জড়িতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তাঁতীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মী জড়িত। তারা মূলত তাঁতীলীগের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক রাকিবিল্লাহ রাকিবের ক্যাডার বাহিনী। এই রাকিবিল্লাহকে পদন্নোতি দিয়ে নিজের হাতগুলোর একটি করেছেন শাহিনা বেগম। দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদকের পদ।

স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য রাকিবিল্লাহকে নিজের কাছে টানেন শাহিনা বেগম।

উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, শাহিনা বেগম যা বলেন, রাকিবিল্লাহ তাই করেন। এর বাইরে তার কোনো নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায় না।

নাদিমের ওপর হামলা, তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাকিবিল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ আসামি। কিন্তু তাকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। নাদিমের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, রাকিবিল্লাহর গ্রেপ্তার না হওয়া এবং তার জবানবন্দি না পাওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন মাস্টারমাইন্ড শাহিনা বেগম।

সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনার পেছনে শাহিনা বেগমের জড়িত থাকার আরও একটি বিষয়কে ‘ক্লু’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, এপ্রিলে যখন নাদিমের ওপর হামলা করা হয়, তখন শাহিনা বেগম ছিলেন ঢাকায়। গত ১৪ জুন হামলার ঘটনার সময়ও তিনি ঢাকা অবস্থান করেন। তাছাড়া প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেও শাহিনা বেগম বিভিন্ন খেল খেলেন। যার মধ্যে অন্যতম ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর একটি ডাকাতির ঘটনা।

ওইদিন দিবাগত রাতে শহরের নয়াপাড়ায় ডাকাতি হয়। ওই সময়েও শাহিনা বেগম ছিলেন ঢাকায়। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত স্থানীয় নেতাকর্মীদের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বকশীগঞ্জ আওয়ামী লীগের এই নেত্রী।

জানা গেছে, সেই ডাকাতির ঘটনায় বকশীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুমান তালুকদারসহ মামলায় ১৫ জনের নামে অভিযোগ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা আটকও হন। স্থানীয়রা বলছেন, যখনই এলাকায় কোনো বড় ঘটনা ঘটে, তখনই ঢাকায় অবস্থান করেন শাহিনা বেগম। ফলে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ থাকে না বা তিনি রাখতে দেন না।

স্থানীয় সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও এমনটা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, বড় কোনো ঘটনার আগে ঢাকায় চলে যান শাহিনা বেগম। সেখান থেকে ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে অপকর্ম ঘটান। দুটি বাহিনী পরিচালনা করেন শাহিনা বেগম। দুটির মধ্যে একটি রাকিবিল্লাহর; অপরটি ইসমাইল হোসেন স্বপন মণ্ডল ও খন্দকার শামীমের সমন্বয়ে গঠিত। উল্লেখ্য, এ দুজন আবার বকশীগঞ্জের উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।

এতো ক্লু থাকার পরও শাহিনা বেগমের নাম মামলায় নেই বা মামলার বাদী মনিরা বেগম তার নাম দেননি- বিষয়টি নিয়ে মানুষের মুখে মুখে প্রশ্ন ঘুরে ফিরছে। কেনো মনিরা বেগম তার স্বামী হত্যায় শাহিনা বেগমের নাম দিচ্ছেন না বা তিনি ভয় পাচ্ছেন কিনা- এটি নিয়েও ‍উত্তর খোঁজেন অনেকেই।

জানা গেছে, ১৪ জুন রাতের ঘটনা, নাদিমের মৃত্যু ও দাফন শেষ হলে গত ১৬ জুন দিবাগত রাতে মনিরা বেগমকে ফোন দেন শাহিনা বেগম। ঢাকা থেকেই তিনি মনিরা বেগমেকে ‘ম্যানেজ করার’ চেষ্টা চালান। এক নম্বর আসামি হতে পারেন ভেবে তিনি মনিরা বেগমকে এই বলে বোঝাতে থাকেন যে, নাদিমের সঙ্গে তার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু ওই রাতে মনিরা বেগমকে মানাতে না পেরে, ১৭ জুন সকালে শাহিনা বেগম তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন। এ সময় থানায় মামলা দায়েরের জন্য যাচ্ছিলেন নাদিমপত্নী। বিষয়টি নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন ফোনের মাধ্যমে জানান বাংলানিউজকে। তিনি বলেন, তার পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শাহিনা বেগমের নেতৃত্বে একটি দল তাদের বাসায় এসেছে।

এ ঘটনার পর মনিরা বেগম ইউপি চেয়ারম্যান বাবুসহ অন্যদের নামে মামলা করলেও, সেখানে শাহিনা বেগমের নাম দেননি। এরপর থেকে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। স্থানীয়দের দাবি, সরাসরি চাপ দেওয়ায় মনিরা বেগম তার স্বামী হত্যা মামলায় শাহিনা বেগমের নাম দেননি।

কিন্তু গত ১৬ জুন যখন বাংলানিউজ সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে রাব্বিরাতুল জান্নাতের সঙ্গে কথা বলে, তিনি জানান, মামলা হলে এর প্রধান আসামি হবেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম। কারণ, তিনি মামলার জন্য হাতে লেখা কাগজের ড্রাফটে শাহিনা বেগমকেই এক নম্বর আসামি করে অভিযোগ লিখেছিলেন।

বকশীগঞ্জবাসী বলছেন, শাহিনা বেগমের নামে সরাসরি অভিযোগ বা মামলা করতে ভয় পেয়েছেন সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম।

এ ব্যাপারে অবশ্য মনিরা বলছেন, শাহিনা বেগমের নাম উঠলেই বলা হচ্ছে তাকে রাজনৈতিক কারণে যেনো না জড়ানো হয়। তাছাড়া আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। আমাকেই তাদের দেখতে হবে।

গত ১৬ জুন রাতে জামালপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নাসির উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিক নাদিমের বাড়িতে তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল বাংলানিউজ। এসপি গণমাধ্যমের তোয়াক্কা না করেই মনিরাকে বলেন, মামলায় রাজনৈতিক কেউ থাকলে খারাপ প্রভাব পড়বে। মামলায় সরাসরি জড়িত না থাকলে চার্জশিটে নাম আসবে না।

এসপির এমন বক্তব্য ভয় ধরিয়ে দেয় মনিরা বেগমের মনে। তাই সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি শাহিনা বেগমকে মামলার আসামি করেননি। এমন অভিমত অনেকেরই।

এ ছাড়াও জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক নাদিমের শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে অনেকেই মনিরা বেগমকে মামলায় শাহিনা বেগমের নাম অন্তর্ভুক্ত না করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

জামালপুরের সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ জানিয়েছে, নাদিমের ওপর হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু নাদিমের মৃত্যু হলে এ অপচেষ্টা বৃথা যায়। তাই শুধু বাবুকে দায়ী করে নেপথ্যে থাকা শাহিনা বেগমকে বাঁচাতে তৎপরতা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় নাদিমের পরিবারকে নানাজন নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সবার একটাই চাওয়া, যেন শাহিনা বেগমের নাম মামলায় না আসে।

এতো কিছুর পরও শাহিনা বেগমের মুখোশ খুলে দিতে চান কেউ কেউ। এরমধ্যে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ‘খলনায়িকা’ হিসেবে তারা শাহিনা বেগমকেই দেখছেন।

বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন মিয়া বলেন, সাংবাদিক নাদিমকে থামাতে যতরকম কৌশল করা দরকার, তিনি সব করেছেন। কিন্তু সফল হননি। সবশেষ তারা হত্যার সিদ্ধান্ত নেন এবং কাজটি করে ফেলেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান বলেন, বকশীগঞ্জ শহর থেকে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন অনেকটা দূরে। এত দূর থেকে এসে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করবে, তাও বাড়ির কাছে বসে, শেল্টার না থাকলে এই কাজ করা সম্ভব নয়। বাবু চেয়ারম্যানকে শাহিনা বেগম শেল্টার দিয়েছেন। তার শেল্টার ছাড়া এই হত্যা করার সাহস বাবু চেয়ারম্যান পাবে না।

বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ফজলুর রহমান কুদু বলেন, নাদিম হত্যাকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের নাম বার বার আসছে। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব সত্য বের হয়ে আসবে।

এসব বিষয়ে কথা হলে, হামলার পেছনে শাহিনা বেগম জড়িত রয়েছেন- নাদিমের পরিবারের এমন দাবি প্রসঙ্গে এসপি নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের অপরাধ বিজ্ঞান বা আইন বলে, ঢাকা থেকে হামলার অংশ হতে পারবে না, এটা সত্য না। যদি নাম আসে, আসামি করা হয়, তাহলে ধরবো। জড়িত থাকলে বা মামলা হলে আটক করা হবে। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, বাবু প্ল্যানমেকার। প্রত্যেকটা জায়গায় বলেছি। আরও মাস্টারমাইন্ড আছে, তারাও বের হয়ে আসবে।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সীমা রানী সরকার বলেন, গ্রেপ্তার ১৩ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত করে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে নিজের প্রতি আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বানোয়াট ও অপপ্রচার। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার ঘটনায় আমার দায় নেই। আমার কোনো কর্মী হামলা করেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ষড়যন্ত্র করে একটি মহল আমাকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

চেয়ারম্যান বাবু আপনার রাজনীতি করেন, বাংলানিউজের প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে প্রসঙ্গে এড়িয়ে যান শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, বাবুর নামে অভিযোগ এলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার বাবা রাজাকার ছিলেন- এমন সংবাদ প্রকাশে আপনি ক্ষিপ্ত ছিলেন কিনা, বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহিনা বেগম বলেন, সে ঘটনা মিটে গেছে।

নাদিম হত্যা ছাড়াও একটি বিষয় বার বার উঠে আসছে, শাহিনা বেগমের বাবা আব্দুল কাইয়ুম মুন্সীকে নিয়ে। স্থানীয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাকে রাজাকার বলছেন। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক মুন্সি বীরপ্রতীক বলেন, বকশীগঞ্জের বাবুল তালুকদারের বাবা মফিজল হক তালুকদার তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন। শাহিনা বেগমের বাবা আব্দুল কাইয়ুম মুন্সী দালাল ও পাকিস্তানিদের কেসের আসামি ছিল। মফিজল তালুকদার নিজে রাজাকার তৈরি করতো, কাইয়ুমও তাই করতো। আমরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী।

আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহিনা বেগমের বাবা রাজাকার ছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে বাংলানিউজ কথা বলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্র এ ব্যাপারে বলেন, এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ বলেন রাজাকার ছিলেন, কেউ বলেন ছিলেন না।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকিবিল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা নেই যে, কোনো কিছুর সত্যতা যাচাই করবে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হঠাৎ করেই বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আব্দুল কাইয়ুম মুন্সীর কন্যা শাহিনা বেগমকে সভাপতি ও মফিজল হক তালুকদারের ছেলে বাবুল তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সুপারিশে।

সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠনের বিষয়টি স্বীকার করেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকিবিল্লাহ। বিষয়টি নিয়ে ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেন নিহত সাংবাদিক নাদিম। যে কারণে শাহিনার নির্দেশে স্বপন ও শামীমের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা করা হয়। এ তিনজনের নামে বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন নাদিম।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।