ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অভিযান চলছে, তবুও আসছে মাদক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
অভিযান চলছে, তবুও আসছে মাদক

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় প্রতিনিয়ত আসছে মাদকদ্রব্য। নানা কৌশল অবলম্বন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে মাদকের চালান আনছে কারবারিরা।

 

অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতিদিনই প্রায় অর্ধশত মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হচ্ছে। সেই সঙ্গে উদ্ধারও হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, বিদেশি মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তবুও বন্ধ হচ্ছে না মাদকের পাচার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ আসামিও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে মাদকের পাচার একেবারে বন্ধ করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।

তারা বলছেন, সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। মাদকের সব কুফল জানিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো গ্রেপ্তার বা অভিযানের মাধ্যমে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- চলতি বছরের ২১ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে মাদক সেবন, বিক্রি ও সরবরাহের দায়ে ৩৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

তাদের কাছ থেকে ৫৯ হাজার ৬২৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০৯ কেজি ৬০৫ গ্রাম গাঁজা, ২ কেজি ১ হাজার ৮৫৫ পুরিয়া হেরোইন, ১৯০ বোতল ফেনসিডিল, ১০.০৮ লিটার দেশি মদ, নেশাজাতীয় ইনজেকশন ৪০টি, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ১২ গ্রাম মাদক জব্দ করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- গত ২১ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ৪২৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬২০ জন। অভিযানে ২৭০ কেজি ৭৬৫ গ্রাম গাঁজা, ৬২ হাজার ৭৫৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫৬৩ পিস ট্যাপেন্টাডল, ২ কেজি ৭৬৫ গ্রাম হেরোইন, ৩৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৫৪২টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন, চোলাইমদ ৬ লিটার, ৫০ পিস এলএসডি, ২২৯ লিটার আরএস, ১৬৫ বোতল বিদেশি মদ, ১০টি গাঁজা গাছ জব্দ করা হয়। এসব মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত চারটি মোটরসাইকেল, একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস ও আটটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। মামলা দায়ের করা হয় ১৪৩টি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তর উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানে আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে মাদকদ্রব্য জব্দ করা হচ্ছে। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করছে।  

গত ২৯ মে সকালে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকা থেকে ৪৭০ বোতল ফেনসিডিল ও ১৬ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০ এর একটি টিম। র‍্যাব-১০ জানায়, মাদক কারবারি রাজন ও সুক্কুর আলী ওরফে সোহেল একটি প্রাইভেটকারে এসব মাদক দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করেন। এরপর তারা কৌশলে প্রাইভেটকারে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি ও সরবরাহের জন্য নিয়ে আসছিলেন।

গত ২৮ মে বিকেলে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. আব্দুল আলিম ও মো. নাছির উদ্দিন নামে দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ। ওই অভিযানে তাদের কাছ থেকে ৯০ কেজি গাঁজা উদ্ধার এবং গাঁজা পরিবহনে ব্যবহৃত একটি পিকআপ জব্দ করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে তারা পিকআপের পেছনের পাটাতনের নিচে বিশেষ কৌশলে তৈরি করা চেম্বারে এসব গাঁজা লুকিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

২ মে রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে ৮১ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ মাদক কারবারি চক্রের মূলহোতা মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে শামীমকে (৩০) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি টিম। র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর মূলত একজন মাইক্রোবাস চালক। তিনি নিজের মাইক্রোবাসে করে এর আগেও অনেক মাদকের চালান ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক কারবারিদের কাছ থেকে বড় বড় মাদকের চালান সংগ্রহ করে পরে কৌশলে তা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি ও সরবরাহ করতেন।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্টে কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর ওরফে শামীম নিজেই একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মাদক পাচারের কাজ করেন। আমরা পুরো সিন্ডিকেটের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। অভিযানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি না হলে মাদক নির্মূল খুব কঠিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এসজেএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।