ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস

অনিয়ম-দুর্নীতিতে চাকরিচ্যুত শতাধিক, উদ্ধার ৩৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
অনিয়ম-দুর্নীতিতে চাকরিচ্যুত শতাধিক, উদ্ধার ৩৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর এ অঞ্চলে দুর্নীতি কমেছে। অনিয়ম-অপরাধের কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন শতাধিক।

উদ্ধার করা হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় এসব প্রক্রিয়া চলমানও রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে ডিএসসিসির নগর ভবনে মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ‘উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ৩ বছর’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তাপসের বক্তব্য অনুসারে ডিএসসিসিতে দুর্নীতি কমেছে। বেড়েছে রাজস্ব আয়। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ বা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন করে চলছেন।

মেয়রে বলেন, শূন্য সহনশীলতা আছে বলেই গত তিন বছরে দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অপরাধে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় জনবলে ঘাটতির প্রকটতা কমাতে ভারি গাড়ির ১০৯ জন চালকসহ পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে, নাগরিক সেবা ও করপোরেশনের নৈমিত্তিক কাজে যেমন গতি এসেছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে তদারকি ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের হার। বিধায় দুর্নীতি কমেছে ও রাজস্ব আয় বেড়েছে।

মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনো করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিগত ৩ বছরে আমরা কোনো খাতে কোনো কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং চৌদ্দটি নতুন খাত থেকে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে করোনাভাইরাস মহামারির মতো বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও রাজস্ব আদায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে, যা অদ্যবদি অগ্রসরমান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর্পোরেশনের রাজস্ব আদায় ছিল মাত্র ৫১৩ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭০৩ দশমিক ৩১ কোটি এবং ৮৭৯ দশমিক ৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

তাপস বলেন, আমরা যেমন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটসহ অনেকগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেছি, তেমনি দখলমুক্ত করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল ঘিরে গড়ে ওঠা কয়েক ডজন অবৈধ বহুতল ভবন ও স্থাপনা। দখলমুক্তির ধারাবাহিকতায় আমরা দীর্ঘ ৮০ বছর পর সূত্রাপুরের মাইশা খাল, তিন দশক পর রায় সাহেব বাজার মোড়, দুই যুগ পর লক্ষ্মীবাজারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পার্কিংয়ের জায়গা, চল্লিশ বছর পর ধলপুর ক্লিনার কলোনি থেকে অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়েছি। ফলে, বিগত ৩ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শতাধিক উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে ৩৪ একরের বেশি জমি উদ্ধার করেছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আগেকার প্রায় সব বকেয়াসহ প্রাত্যহিক পাওনা পরিশোধ করেছি। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে জলাবদ্ধতা নিরসনে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন, খাল ও নর্দমা হতে বর্জ্য অপসারণ, কর্পোরেশনের প্রায় সব গাড়ির নিবন্ধন, দীর্ঘ ৫০ বছরের ভূমি উন্নয়ন করসহ অন্যান্য পুঞ্জীভূত পাওনাদিও পরিশোধ করা হয়েছে।

ডিএনসিসির এ পিতা বলেন, সামষ্টিকভাবে বলতে পারি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অটল, অদম্য ও অনমনীয় কর্মোদ্যোগের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আজ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা হিসেবে যেমন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি তাসের ঘরের মতেই ভেঙে পড়তে শুরু করেছে দীর্ঘদিনের দখলদারিত্বের পোক্ত সাম্রাজ্য। আপনাদের সবার সহযোগিতায়, আমরা দখলদারিত্ব সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়েই এগিয়ে চলব।

সংবাদ সম্মেলনে গত তিন বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।