ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

হোটেলের দরজা দিয়ে হতো ভিডিও, ব্ল্যাকমেইলের পর বের হলো তথ্য!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
হোটেলের দরজা দিয়ে হতো ভিডিও, ব্ল্যাকমেইলের পর বের হলো তথ্য!

রাজশাহী: আবাসিক হোটেলের বিভিন্ন দরজায় আগে থেকেই কৌশলেই ছিদ্র করে রাখা হতো। এরপর ওই কক্ষে কোনো জুটি বা দম্পতি রাতযাপন করলেই গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করা হতো।

পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার দাবিতে করা হতো ব্ল্যাকমেইল। এমনই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহীর রাজপাড়া থানা পুলিশ।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইলের পর মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ‘পপুলার-২’ নামের ওই আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

গ্রেফতার দুজন হলেন- ওই হোটেল ব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম (২৮) এবং একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুল নূর (২১)। শরীফুলের বাড়ি নওগাঁর পোরশায় এবং নূরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তাদেরসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ওই ছাত্র গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন। এ মামলায় ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

মামলার বরাত দিয়ে রাজশাহীর রাজপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) কাজল কুমার নন্দী বলেন, আবাসিক হোটেলের ওই ভবনটির চতুর্থ তলাতেই মালিকের বাসা। পঞ্চম তলায় মেস। আর প্রথম থেকে তিনতলা পর্যন্ত আবাসিক হোটেল। সেখানে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুল নূর থাকেন। সেই সূত্রে ওই হোটেলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রী হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে উঠেছিলেন। ওই কক্ষের দরজায় এমনভাবে ছিদ্র করা রয়েছে যে সেখানে ক্যামেরা ধরলে বিছানার দৃশ্য আসে।

দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা লক্ষ্মীপুর এলাকায় থাকা বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মানুষজন আসেন। চিকিৎসা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পেতে তাদের অনেক সময়ই রাত হয়ে যায়। আর বেশির ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক এই লক্ষ্মীপুর এলাকাতে হওয়ায় এসব রোগী ও তাদের স্বজনেরা সেখানকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাতযাপন করেন। এ সুযোগে হোটেল পপুলার-২-এ এমন ব্লাকমেইলের ঘটনাগুলো ঘটছিল।

গত রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী তার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে ওই হোটেলে ওঠেন। তার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে রাজশাহীতে এসেছিলেন। রাতে হোটেল পপুলার-২-এ ওঠার ঘণ্টা দুয়েক পর তাদেরকে বাইরে আসতে বলা হয়। তারা বাইরে না এলে হোটেলের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন হোটেলের ব্যবস্থাপক ও তার সহযোগীরা। তাদের চাপের মুখে পরে ওই শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রী দরজা খুলে দেন। এ সময় তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। আর এই টাকা না দিলে গোপনে ধারণ করা তাদের ভিডিও ইন্টানেটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তারা।

এ সময় ওই শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রী তাদের সঙ্গে জোরাজোরি করে কোনোভাবে ওই হোটেল থেকে বের হয়ে আসেন। পরে রাজশাহী স্টেশনে গিয়ে বাকি রাত কাটান। পরের দিন সকালে স্ত্রীকে বাড়ির উদ্দেশে ট্রেনে তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান ওই ছাত্র। এরপর দুপুর থেকে ওই শিক্ষার্থীকে হোটেলের কর্মচারীরা ফোন করতে থাকেন। তাদের কাছে অনেক ভিডিও রয়েছে দাবি করে দেখা করতে বলেন। ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তার বিভাগের এক বড় ভাইকে জানান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে জানালে রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানানো হয়। তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন ওই হোটেলে গিয়ে আবদুল নূরকে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে তার মোবাইল ফোন জব্দ করে ওই ভিডিওগুলো পান। হোটেলের তিনজন মালিকের মধ্যে একজনের নাম শাহীনুল হক। বর্তমানে এই ঘটনাটি তদন্ত করছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এসএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।