ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ মে ২০২৪, ১৯ জিলকদ ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

বায়ু কলেজে পাচারের রমরমা ব্যবসা আরিফের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
বায়ু কলেজে পাচারের রমরমা ব্যবসা আরিফের

ঢাকা: লোগান নামে একজন মালয় তামিল ব্যবসায়ী চালু করেছেন বায়ু কলেজ। এটি তার পারিবারিক ব্যবসা।

কলেজটি পরিচালনা করছেন নিজের স্ত্রী সন্তানদের নিয়েই। সেলানগরে নিজেদের বাড়ির পাশেই এই কলেজের অবস্থান, আর শিক্ষার্থী বলতে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি। ঢাকায় ‘মালয়েশিয়া স্টাডি গাইডস’ নামে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আরিফুর রহমান কাজ করছেন বায়ু কলেজের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে।
 
সেলানগরের কাপারে ১ তিংকাত ১ ও ২ লোরং দাতো কায়া কেচিল ৫, পেকান কাপার বাতু ১১ তে অবস্থিত বায়ু কলেজ। সূত্র জানায়, এই কলেজটির অর্ভ্যথনা রুমটি প্রশাসনিক রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এখানেই পাসপোর্ট জমা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর ৬টি ডিপ্লোমা কোর্সের ঘোষণা দিলেও ক্লাসরুম একটি।  
 
মালয়েশিয়া সূত্র জানায়, এই কলেজটি লোগানের শ্বশুরের। লোগান এবং তার স্ত্রী এনা মিলেই কলেজটি পরিচালনা করেন। ২০০১ সাল থেকেই কলেজটি চলছে। তখন শুধুই ভারতের তামিল নাড়ু অঞ্চল এবং স্থানীয় মালয় তামিল কিছু ছাত্রদের দিয়ে চলতো কলেজটি। মাঝখানে বেশ কিছু সময় বন্ধও ছিল। এরপর ২০১৫ সালে নতুন করে যাত্রা শুরু করে বায়ু। এবার বিদেশি ছাত্র আনার অনুমতি নেন লোগান। এরপর থেকেই বাংলাদেশিদের নিয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে বায়ু কলেজ।
 
ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে শিক্ষার্থী পাঠানোর দায়িত্ব নেন বাংলাদেশের আরিফুর রহমান। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ করেন ১৪ জন এজেন্ট। আরিফের সহযোগিতায় আদম ব্যপারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন বায়ু কলেজের নামে মানুষ পাঠানোর ব্যবসায়।
 
সম্প্রতি কাপারের এই কলেজ থেকে নিজেদের পাসপোর্ট উদ্ধার করে পালিয়ে যান দুই বাংলাদেশি। কুমিল্লার রাসেল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, দেশে আরিফ সাহেব বলেছিলেন এখানে পার্ট-টাইম চাকরির সুবিধা রয়েছে। অথচ এমন কোন সুবিধা নেই, আর এই কলেজ কুয়ালালামপুর থেকে অনেক বাইরে। তামিল অধ্যুষিত এ এলাকায় জাতিগত হয়রানির শিকারও হতে হয়।
 
তিনি বলেন, কলেজ পাসপোর্ট আটকে রাখে। ১৫ দিনের মধ্যে স্টিকার লাগিয়ে দেয়ার কথা, অথচ তিন মাস পার হলেও কোন খবর নেই পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার। পরে দেশে ফেরত আসবে বলে কলেজ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তারা।
 
রাসেল বলেন, এখানে ৩৫ বছর বয়সী বাংলাদেশিও রয়েছেন, যিনি শিক্ষার্থী ভিসায় এসেছেন। তামিল পরিবারটি হয়তো এক হাজারের মতো ভিসা বিক্রি করে কলেজটি বন্ধ করে দেবে।
 
কলেজের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়েও বায়ু কলেজের ব্যনারে লোক পাঠানো হচ্ছে। আদম ব্যবসায়ীরা ৩০ বছর বয়সী মানুষকে মেকআপ করিয়ে বা এডিট করে ২০ বছরের তরুণের মতো ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন। একটু বেশি টাকা দিলেই এসব ব্যক্তির ভুয়া ছবি ও কাগজপত্রের বৈধতা দিয়ে দেয় বায়ু কলেজ।
 
মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডে অবস্থিত মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট গাইডসের অফিস।

আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক সময় এজেন্টরা এ ধরনের কাজ করে থাকেন। পৌঢ় বয়সীদেরও শিক্ষার্থী হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
 
নিজেই জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী জোগাড়ের চেষ্টা করছেন তিনি।
 
তবে মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতারণার বিষয়ে মালয়েশিয়ায় ফোনের এজেন্টদের দায় দেন তিনি। বলেন, এরা অনেক সময় টাকা নিয়ে ফোন অফ করে দেন। তখন শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ