ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ট্রাইব্যুনাল সরানো সর্বজনগ্রাহ্য হবে না-মন্ত্রণালয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
 ট্রাইব্যুনাল সরানো সর্বজনগ্রাহ্য হবে না-মন্ত্রণালয়

স্থান সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরাতে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি পুর্নবিবেচনা করতে অনুরোধ জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

ঢাকা: স্থান সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরাতে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি পুর্নবিবেচনা করতে অনুরোধ জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন) কাজী মুশফিক মাহবুব রবিন।

   

চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ ভবন থেকে অন্যত্র সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। এবং তা সর্বজনগ্রাহ্য হবে না। বরং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হলো।

চিঠিতে আরও বলা হয়, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। এ ভবনটি পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের গভর্নর এর সরকারি বাসভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে এ ভবনটিকে পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধসমূহ যেমন যুদ্ধাপরাধ,গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও যৌক্তিক ও নিরাপদ স্থাপনা না পাওয়ায় সরকার পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেন। উল্লেখ্য এ ভবন থেকে আইন কমিশন ও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন স্থানান্তর করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য শুরু করার পর অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার সুসম্পন্ন হয়। সে কারণে এ ভবনটির ঐতিহ্য ও গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ চায় ঐতিহাসিক এ ভবনটির মর্যাদা সমুন্নত রেখে এ ভবনেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ অব্যাহত খাকুক। উপরোল্লিখিত সকল বিষয় বিবেচনা করে পুরাতন হাইকোর্ট ভবন হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে ভবনটি সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে দখল হস্তান্তর সমীচিন হবে না। ’    

অবশ্য এই চিঠির আগেও দুই দফায় ট্রাইব্যুনাল সরাতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট।

পাশাপাশি গত ২৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬’ উদ্বোধনকালে সুপ্রিম কোর্টের স্থান সংকটের কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

তিনি বলেছেন, ‘বিচারপতিদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। সীমিত পরিসরে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে ঐতিহাসিক স্মারকগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র অবকাঠামোগত সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আবারো অনুরোধ করছি’।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার সংক্রান্ত বস্তু ও ঐতিহাসিক স্মারকগুলো সংগ্রহ করে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে সংরক্ষণ ও একটি আর্কাইভ থাকা আবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্থান সংকুলানের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘গত ৩০ জুনের পরে পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হলেও এর কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হত্যার মতো মর্মান্তিক মামলাগুলো যদি জেলা আদালতে হতে পারে, তাহলে যুদ্ধাপরাধীর মামলার বিচার সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনের বাইরে হতে কোনো অসুবিধা নাই’।

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের বসার স্থান সংকট রয়েছে। আমাদের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা বারান্দায় চেম্বার করেন। সুপ্রিম কোর্টে কোনো প্রশাসনিক ভবন নেই। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শিশুদের পরিচর্যায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ডে কেয়ার সেন্টার এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মেডিকেল সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তীব্র সংকট রয়েছে’।

বাংলাদেশ সময়:১৯০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯,২০১৬
ইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।