ঢাকা, সোমবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জুন ২০২৫, ০৫ জিলহজ ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে আপিলের রায় রোববার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪৯, মে ৩১, ২০২৫
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে আপিলের রায় রোববার

ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ের জন্য আগামীকাল রোববার (১ জুন) দিন ধার্য করা হয়েছে।

আপিল বিভাগের রোববারের জন্য প্রকাশিত কার্যতালিকায় মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এক নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এর আগে, ১৪ মে চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করা হয়েছিল। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

শুনানির দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রিট
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।

রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয় এবং নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানানো হয়।

এই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি হয়ে অবসর) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। এরপর জামায়াত একাধিকবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় এবং দলের নাম পরিবর্তন করে ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ থেকে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ রাখে।

নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা হাইকোর্টের রায়ে
২০১৩ সালের ১২ জুন রুলের শুনানি শেষ হয়। ১ আগস্ট হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি পদত্যাগ করেন) এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক (গত বছরের ১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন)।

সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, এই নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসর) একই বছরের ৫ আগস্ট জামায়াতের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করেন। ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।

আপিল খারিজ
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন। ওইদিন রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর এবং আহসানুল করীম। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান।

জিয়াউর রহমান জানান, সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধা এবং অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীনের অনুপস্থিতির কারণে ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছিল। আইনজীবীরা উপস্থিত না থাকায় আদালত মামলাটি ডিসমিস ফর ডিফল্ট (ডিফল্টের কারণে খারিজ) করেছেন। তবে রেস্টোর (পুনরায় শুনানি) করার সুযোগ আছে, যা আদালতের এখতিয়ার।

আপিল পুনরুজ্জীবন
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার পুনর্নির্বাচিত হয়। জুলাই থেকে কোটা বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়, যা সরকার পতনের দাবি পর্যন্ত গড়ায়। এরপর ১ আগস্ট সরকার জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ বাতিলের উদ্যোগ নেয়। ২৮ আগস্ট সরকার সেই নিষিদ্ধ আদেশ প্রত্যাহার করে।

এরপর জামায়াত আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে। আদালত ২২ অক্টোবর বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি পুনরুজ্জীবন (রিস্টোর) করেন। এরপর ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৪ মে।

ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।