বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদনের ওপর বুধবার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রিটকারীর করা আবেদনে মঙ্গলবার (২৭ মে) এ আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক।
আদালতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। ফলে মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথে বাধা কেটে যায় বলে জানান তার আইনজীবী।
ওই দিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭ পৃষ্ঠার এ আদেশ প্রকাশ করা হয়। এরপর সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ২৬ মে সোমবারের মধ্যে শপথ পড়াতে স্থানীয় সরকার সচিবকে আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন ইশরাক হোসেন।
নোটিশে বলা হয়, রায় অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ২৭ মে গেজেট জারি করেছে। আইন অনুসারে গেজেট জারির ৩০ দিনের মধ্যে শপথ নিতে হবে। এর মধ্যে ২৯ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু শপথ পড়াতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এদিকে শপথ পড়াতে গত ১৭ মে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরপর ২১ মে একটি আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। তাতেও সাড়া দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুসারে আমার মক্কেল ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আজকের (২৬ মে) মধ্যে শপথ পড়াতে হবে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা বা আদালত অবমাননার কার্যক্রম নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সোমবার শপথ হয়নি।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন বিএনপি নেতা ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।
পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছিল।
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন তার সমর্থকেরা। নগর ভবনের সামনে টানা অবস্থান নিয়ে পরে গত বুধবার থেকে মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান করছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন ইশরাক।
ইএস/এমজেএফ