ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

পলাতক আসামিদের মৃত্যু: বাগেরহাটের ৯ জনের রায় পেছালো

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২৩
পলাতক আসামিদের মৃত্যু: বাগেরহাটের ৯ জনের রায় পেছালো

ঢাকা: পলাতক দুই আসামির মৃত্যুর খবরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের নয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা পিছিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।

আদালতে প্রসিকিউটর ছিলেন রানা দাশ গুপ্ত ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।  

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, সকালে ডিফেন্স পক্ষ থেকে জানায় এ মামলায় পলাতক দুইজন আসামি মারা গেছেন। এর মধ্যে একজনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তা দাখিল করা হয়েছে। অপরজনেরটা পাইনি। এজন্য রায় পেছানো। পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকে। ওনারা তদন্ত করে এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠায়। সেটা আমরা দাখিল করি। যেহেতু দুইজন আসামি মারা গেছেন, তাহলে তাদের তো মামলা থেকে বাদ দিতে হবে। এ কারণে আদালত রায়ের তারিখ পিছিয়ে আদেশের জন্য ৩০ নভেম্বর দিন রেখেছেন।  

এ মামলায় বর্তমানে নয় আসামির মধ্যে ছয়জন পলাতক ছিলেন। কারাবন্দি তিন আসামি হলেন: খান আকরাম হোসেন, শেখ মো. উকিল উদ্দিন ও মো. মকবুল মোল্লা।

গত ৭ নভেম্বর এ নয়জনের বিষয়ে রায়ের জন্য ৯ নভেম্বর দিন ঠিক করা হয়েছিল।  

আসামিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ

এক নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির সমস্ত মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।

দুই নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়।

তিন নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।

চার নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

পাঁচ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম থেকে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায়ভাবে আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।

ছয় নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে।  কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

সাত নম্বর অভিযোগ: বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানী কর্মকারকে জোরপূর্বক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকিয়ে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানী কর্মকারসহ আটক অন্য চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২৩
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।