ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ভূতের লেজ | বিএম বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪
ভূতের লেজ | বিএম বরকতউল্লাহ্

গভীর রাত। মাথায় ভয়ঙ্কর ভূতের কাহিনী এসে তোলপাড় করছে।


জানালার পাশে টেবিল, উপরে টেবিল ল্যাম্প। একখণ্ড সাদা কাগজ নিয়ে খেখা শুরু করলাম। একচোটে লিখে ফেললাম গল্পটি। তারপর যখন পড়তে শুরু করলাম তখন ভয় ভয় লাগছিল আমারই। গল্পটা অসম্ভব ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে।

মনে মনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে গল্পটা সাইজ করতে লাগলাম।
হঠাৎ জানালার ধারে হিস হিস শব্দ! মনোযোগ দিলাম না। কিন্তু শরীরটা ঝাড়া দিয়ে উঠল। একে তো ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প লিখে ভয় ভয় করছিল তার ওপর আবার হিস্ হিস্? তাকাতে চাইছে না মন।

একটু পরে মোটা গলায় প্রশ্ন- কী লিখছিস রে?
চট করে মাথা তুলে জানালার দিকে তাকাতে চেয়েও আর তাকাই নি, গল্পের দিকে চোখ রাখলাম।
আবার ধমকের সুরে বলল, কী, কথা বলছিস না যে! কী লিখছিস, বল।
আপন মনে জবাব দিলাম, গল্প লিখলাম, একটা ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প।
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প? ভূত দেখেছিস?
মাথা নেড়ে বললাম, নাহ্, ভূত দেখি নি, আর ভূত দেখতে যাবো কোন দুঃখে। ভূত কি কোনো দেখার জিনিস!
তয় গল্প লিখছিস ক্যামনে?

আরে বাবা, দেখিনি বলেই তো লিখতে পারছি। হাজার রকমের ভূত! হাজার রকমের রং-রূপ, হাজার রকমের কাহিনী! মহা ভয়ঙ্কর, মহা পাজি ভূতের গল্প!
যদি দেখতিস?
সেদিনই লেখার ইতি টানতে হতো।
কেন?
আহ্হা রে কিচ্ছু বোঝে না। আমার কল্পনাগুলো শুধু দেখা ভূতের মধ্যেই না খালি হাবুডুবু খেতো, এর বাইরে যাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যেতো না আমার?
আমি ভূত, আমি কি তোর সামনে উপস্থিত হব?
আমি একটু থতমত করে বললাম, না, না, না, ভুল করেও না। কোনোদিন না।
কেন?
কেন আবার, তুমি কি চাও না আমি ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প লিখে নামকরা ‘ভূত-লেখক’ হই? তুমি কখনও আমার সামনে এসো না ভাই, প্লিজ, এক্ষুনি চলে যাও এখান থেকে।

ঠিক আছে। তবে তোরা মানে ভূতলেখকেরা ভূত না দেখে, ভূত সম্পর্কে না জেনে যেভাবে আমাদের ভয়ঙ্কররূপে তুলে ধরছিস, এতে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। তোদের কারণেই সবাই আমাদের খারাপ জানে, ভয় পায়। নাম শুনলে বুকে থুতু মারে, ভয়ে টাসকি খেয়ে পড়ে যায়। তারপর ওঝা-বৈদ্য এসে আমাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে। তোরা আমাদের গোটা মানবজাতির শত্রুতে পরিণত করে ফেলেছিস। আমরা কি সবাই খারাপ?

তোদের মধ্যে যেমন ভালো-মন্দ মানুষ আছে আমাদের মধ্যেও তেমন ভালো-মন্দ ভূত আছে। আর আমাদের মধ্যে ভালো ভূতের সংখ্যাই বেশি। কই, তোরা ক’জন ভালো ভূতের কথা লিখেছিস? তোরাই আমাদের মানবসমাজে অসভ্য আর বিপজ্জনক করে তুলেছিস। আমরা বিপদে পড়েও মানুষের কাছে এসে ঘেঁষতে পারি না। সুযোগ পেলে মানুষেরা আমাদের বদনাবন্দি করে গরম পানি ঢেলে সেদ্ধ করে ফেলে। অথচ আমরাও চাই মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে। কিন্তু পারি না। এতে তোদের ওপর আমরা কতটা নাখোশ তা অচিরেই টের পাবি।

একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললাম, আরে বেটা আমরা হলাম গিয়ে লেখক। আমরাই তোদের এ জগৎসংসারে ভয়ঙ্কর করে তুলেছি। তোদের নাম শুনলে ধনী-গরিব, শিশু-বুড়ো, রাজা-প্রজা, দুর্বল-পালোয়ান ভয়ে অস্থির হয়ে যায়, এটা বুঝি যুৎ লাগছে না; বাড়াবাড়ি করলে তোদের এমন দুর্বল সেন বানিয়ে ছেড়ে দেবো যে, যেখানে যাবি সেখানেই খাবি মাইর। মাইর খেতে খেতে ছাতু হয়ে যাবি। তারপর বুঝবি লেখক কী জিনিস।

ভূতটা রেগে-মেগে ফুঃ ফাং, ফুঃ ফুঃ শব্দ করে আমাকে বলল, তোর ঠিক পেছন দিক থেকে একটা লেজ গজাবে। লোকেরা তোকে দেখে ভ‍ূত, বানর, হনুমান বলে ছুটে পালাবে। কোথাও ঠাঁই পাবি না তুই। তখন বুঝবি ভূতের গল্প লেখার আসল মজা! কথাটা মনে রাখবি। গেলাম।

ক’দিন যাবৎ আমার শরীরটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। আমার পেছন দিকটায় টনটন ব্যথা করছে। হাত দিয়ে দেখি কী যেন একটা ফুলে উঠছে বাঁশের কোড়লের মতো! ভয়ে আমার ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। এটা যে কীসের আলামত আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না!



বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।