ঢাকা, শনিবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

আয়কর দিলেও জাকাত দিতে হয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৭
আয়কর দিলেও জাকাত দিতে হয় আয়কর দিলেও জাকাত দিতে হয়

নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের ওপর যে কর দেওয়া হয়, তাকে আয়কর বলে। সরকারি আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে- আয়কর। আমাদের দেশে আয়কর সংক্রান্ত আলাদা আইন, নীতিমালা ও কর্তৃপক্ষ রয়েছে।

জনগণকে আয়কর দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশ কয়েক বছর ধরে নভেম্বর মাসে আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে। এবারও শুরু হয়েছে আয়কর মেলা।

আমরা মনে করি, বিষয়টি ইতিবাচক উদ্যোগ।  

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রদত্ত এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা ১ কোটির অনেক কম। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সামনে আমরা মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন দেখি। এ ক্ষেত্রে আয়করদাতার সংখ্যা এত কম হওয়ার কারণ নেই। বিষয়টি নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা প্রয়োজন।  

এক্ষেত্রে কোথাও ঘাটতি আছে কিনা সেটাও খুঁজে বের করা দরকার। কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যেনো আয়কর ফাঁকি দিয়ে পার পেতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা আবশ্যক। সেই সঙ্গে দরকার আয়কর আদায় ব্যবস্থাপনা আরও সহজ করা।

যারা বেশি আয় করেন, সরকার তাদের কাছ থেকে কর নিয়ে রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করবেন। তাই সরকারের ব্যয়নীতিও এখানে স্পষ্ট হওয়া দরকার। সরকারের ব্যয় যে পরোক্ষভাবে আয়করদাতাও ভোগ করবেন, সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট হতে হবে।  

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ করের বাইরে। যাকে কালোটাকা বলে অভিহিত করা হয়। আয়কর বাড়াতে হলে এমন কালোটাকার লেনদেন, উৎস ও ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করতে হবে।  

অনেকে প্রশ্ন করেন, আমি তো নিয়মিত জাকাত দিচ্ছি। তাহলে আর আয়কর কেন দেবো? তাদেরও জাকাত আর আয়করের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বুঝাতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে সাহেবে নিসাব বা সম্পদশালী হলেন যার কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের অতিরিক্ত স্বর্ণ, রৌপ্য, নগদ টাকা ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সবক’টি রয়েছে, যার সমষ্টির মূল্য সাড়ে সাত তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম) স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রুপার সমান হয়- তিনিই সম্পদশালী। তাকে বছরান্তে উদ্বৃত্ত সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ হারে জাকাত দিতে হয়।  

জাকাতে হিসাব ও আদায় খুব সহজ। অন্যদিকে আয়করের হিসাব সম্পূর্ণ আলাদা। আয়কর দেওয়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয় আয়ের ওপর ভিত্তি করে।  

কোনো ব্যক্তি যদি বছরে ১৪ লাখ টাকা বেতন পান, তাহলে তাকে ১৪ লাখ টাকার আয়কর দিতে হয়। তা প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো হতে পারে। অন্যদিকে ওই লোকই যদি বছর শেষে মাত্র ২ লাখ টাকার মালিক থাকেন, তাহলে তাকে মাত্র ২ লাখ টাকার আড়াই শতাংশ ৫ হাজার টাকা জাকাত দিতে হবে। প্রত্যেক মুসলিম নাগরিককে জাকাত ও আয়কর দু’টোই দিতে হয়।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হলো- জাকাত। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় গিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করেন। তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত আদায়ের ব্যবস্থা চালু হয়। জাকাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদিসে প্রচুর নির্দেশনা দেওয়া আছে।  

এখন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। এখনকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাগরিকরা সরকারকে জাকাত নয় আয়কর দেন। এই আয়করই হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রের নাগরিকরা যেখানে সরকারকে আয়কর দিচ্ছেন, সেখানে জাকাত দেওয়াটা বাধ্যতামূলক কিনা?

এ বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বলেন, আয়কর দিলেও জাকাত দিতে হবে। আয়কর হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কর। আর জাকাত হচ্ছে ধর্মীয় কর। এটা আল্লাহর নির্দেশ। তাই আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে, তাকে জাকাত দিতেই হবে।

তবে হ্যাঁ, ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু থাকলে কোনো নাগরিককে আলাদাভাবে আর আয়কর দিতে হতো না। জাকাতই আয়করের বিকল্প হতো। কারণ, এখন জাকাত আদায় করে মানুষ ব্যক্তি উদ্যোগে, তখন জাকাত আদায় করতো রাষ্ট্র।  

ইসলামের বিধান হলো- সম্পদের পরিশুদ্ধির জন্য জাকাত দেওয়া অপরিহার্য। ধনী-গরিবের সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য ইসলামে জাকাত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্র হওয়া জরুরি। কিন্তু আয়করের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।