ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাগেরহাটের চুনাখোলা মসজিদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাগেরহাটের চুনাখোলা মসজিদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ইউনেস্কো ঘোষিত বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি বাগেরহাটের ‘ঐতিহাসিক মসজিদের শহর’। যেখানে বিশ্বখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ তৎকালীন খলিফতাবাদ নগরের আরো কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও অনুপম কারুশৈলীর কয়েকটি মসজিদ রয়েছে।

বাগেরহাট: ইউনেস্কো ঘোষিত বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি বাগেরহাটের ‘ঐতিহাসিক মসজিদের শহর’। যেখানে বিশ্বখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ তৎকালীন খলিফতাবাদ নগরের আরো কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও অনুপম কারুশৈলীর কয়েকটি মসজিদ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ১৫টি ঐতিহাসিক নগরীর অন্যতম মধ্যযুগীয় শহর খলিফতাবাদ। হযরত খানজাহান (র.) নির্মিত প্রাচীন এই শহরকে ১৯৮৫ সালে এতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ৩২১ নম্বর ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো।  

ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাটের উল্লেযোগ্য নিদর্শনগুলো হলো, খানজাহান নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিবি বেগনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, জিন্দাপীর মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, রেজা খোদা মসজিদ, রণবিজয়পুর মসজিদ, সাবেকডাঙ্গা মনুমেন্ট ও সিঙ্গাইর মসজিদ।

অনন্য নির্মাণশৈলীর এসব নির্দশন বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদের এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু সম্প্রতি চুনাখোলা এক গম্বুজ মসজিদের কোর জোনের (প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত এলাকা) ভেতরে স্থানীয় এক ব্যক্তি পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন।

এতে করে চুনাখোলা মসজিদটি তার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সচেতন মহলের উদ্বেগ, এতে করে হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই মধ্যযুগের অনন্য পুরাকীর্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, চুনাখোলা মসজিদের গা ঘেঁষে পশ্চিম দিকে স্থাপনা নির্মাণকারী মো. হান্নান শেখকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে নির্মাণকাজ বন্ধে কয়েক দফা নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কাজ বন্ধ না করে উল্টো আদালতে মামলা করেছেন।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াকাড়া ইউনিয়নের মরগা গ্রামে অবস্থিত চুনাখোলা মসজিদ। মসজিদটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ১২ দশমিক ৯ মিটার।  

সুলতানী আমলের স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদের দেয়াল ২ দশমিক ৩৬ মিটার প্রশস্ত। ভেতরে পশ্চিম দেওয়ালে সুদৃশ্য পোড়া মাটির কারুকাজ (টেরাকোটা) সজ্জিত দুটি ছোট ও একটি বড় মেহরাব রয়েছে।

অপর তিন দিকে তিনটি প্রবেশদ্বারসহ উত্তর দক্ষিণে একটি করে মোট ৩টি দরজা রয়েছে। বক্র ছাদপ্রান্ত ও বাইরের দেয়ালের চতুর্দিকে সুদৃশ্য পোড়ামাটির আলপনা।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার অমূল্য এ স্থাপনাকে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের হাতে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ন্যস্ত করে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমানা প্রাচীরবিহীন মসজিদটির বাইরের মেঝের সমতলের রয়েছেন মগরা বিলের পানি। ফলে অতি বর্ষণ হলেই মসজিদের ভেতরে পানি প্রবেশ করেন। এজন্য পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সম্প্রতি পূর্ব দিকে একটি রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছে।

মসজিদের তিন দিকেই আগে পুকুর ছিল। কিছুদিন আগে পশ্চিম দিকে পুকুরের মালিক হান্নান বালু ও মাটি ফেলে জমি উঁচু করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

বিশ্ব ঐহিত্যের এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসছেন মগরা গ্রামে। কিন্তু এই মসজিদ ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকলেও লাগায়ো স্থাপনা নির্মাণে উদ্বিগ্ন তারাও।

আরো পড়ুন-
ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাগেরহাটের চুনাখোলা মসজিদ..

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।