ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

শিক্ষকরা নবীজীর আপনজন সমতুল্য

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৬
শিক্ষকরা নবীজীর আপনজন সমতুল্য ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর ও জীবনের ফুল-বাগানের মহান স্থপতি। শিক্ষকদের অতি উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, মানবজাতির সবচেয়ে বড় শিক্ষক বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ব অনুভব করতেন।


 
যোগ্য নাগরিক তৈরির পেছনে জন্য যোগ্য ও আদর্শ শিক্ষকের রয়েছে ব্যাপক গুরুত্ব। একজন যোগ্য শিক্ষকের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট। একজন যোগ্য শিক্ষক কখনও ছাত্রদের মাঝে কোনো ক্ষেত্রেই বৈষম্যমূলক আচরণ করেন না।

ইসলামে শিক্ষকতা পেশাকে অনেক সম্মানের চোখে দেখা হয়েছে। ইসলাম মনে করে, একজন শিক্ষকের মাঝে বিশেষ কিছু গুণ থাকতে হবে। ওই গুণগুলোর অন্যতম হলো- জ্ঞান, ধৈর্য, দয়া, ন্যায়বিচার, ভালোভাবে বোঝানোর ক্ষমতা, মিষ্টভাষী, সদালাপী, বিনয়ী ও ক্ষমাশীলতা।

সুন্দর ও আকর্ষণীয় এবং সহজবোধ্য ভাষায় কথা বলতে পারাটা ভালো শিক্ষকের  অন্যতম গুণ। তবে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে যে কথাটি মনে রাখতে হবে, তাহলো- শিক্ষক যতক্ষণ নিজেকে পরিশুদ্ধ, আত্মগঠিত ও আত্মসচেতন করতে সক্ষম নন; ততক্ষণ তার কথা বা ভালো উপদেশ থেকে সুফল আশা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন আমাদের বলে, ‘তোমরা কেন সে কথা বলো; যা নিজে করো না?’

তাই ভালো ও সুযোগ্য ছাত্র গড়ে তোলার জন্য আগে শিক্ষকদের উন্নত গুণ, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আমার জানি ও এটা মানি যে, শিক্ষক শিক্ষার্থীর জ্ঞানবৃক্ষকে অস্তিত্ব দেয়। এ কারণে একজন শিক্ষকের উচিত ছাত্রদেরকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া। তাই শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি আচার-আচরণ ও নীতি-নৈতিকতার দিক থেকেও আদর্শস্থানীয় হতে হবে। ইসলাম মনে করে, ছাত্র- শিক্ষকের সম্পর্কটা হলো- আত্মিক। শিক্ষক ছাত্রদেরকে নিজের সন্তানের মতো মনে করবেন এবং সে অনুযায়ী আচরণ করবেন। আর এ কারণেই শিক্ষকতা পেশা সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকতা অতি সম্মানিত ও মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের সমাজে এমনকি জাতীয়ভাবে শিক্ষকদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। ক্ষেত্রবিশেষ শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের নজরে দেখা হয়।

বলতে লজ্জা হয়, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার আপন নয়’- এই হাদিসের আলোকে বলা যায়, যারা শিক্ষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে তারা তো পরোক্ষভাবে প্রিয় নবী (সা.)-এর আপনজনদেরই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখছে। আর প্রিয় নবী (সা.)-এর আপনজনদের সঙ্গে বিরূপ ধারণা পোষণকারী কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুপারিশ লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।

আমরা মনে করি, জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে প্রয়োজন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পেশাগত স্বাধীনতা থাকা দরকার। এর পাশাপাশি যথার্থভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। দেশব্যাপী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মর্যাদা সুরক্ষাসহ শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

দেশব্যাপী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার প্রদান ও মর্যাদা সুরক্ষাসহ শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে প্রায় ১৫ হাজারের অধিক কওমি মাদ্রাসাসহ নূরানি মাদ্রাসা ও হিফজ বিভাগের শিক্ষকদের কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে একীভূত করা যায় সেটা নিয়েও ভাবতে হবে; তাদের বিভিন্ন ন্যায্য নাগরিক অধিকার প্রদানে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সমাজে নৈতিকতা ও ধর্মশিক্ষা বিস্তারসহ নিরক্ষরতা দূরীকরণে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে এটা স্বীকার করতে হবে। স্বীকৃতিহীন এসব শিক্ষকের কথা সমাজে অনালোচিতই থাকছে, যা সভ্য সমাজের জন্য পীড়াদায়ক ঘটনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।