মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দেশের ৭২১ ইউপিতে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর আরও পাঁচ ধাপে দেশের নির্বাচন উপযোগী ইউপিগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করবে সংস্থাটি।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে উৎসবের আমেজ যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি কিছু কারণে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় হত্যা মামলার আসামী থেকে শুরু করে ধর্ষণকারী, মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, আদম ব্যবসায়ী ও উঠতি সন্ত্রাসীসহ অনেকেই আছে। এই প্রার্থীদের অনেকেই ক্ষমতা, অস্ত্র ও অবৈধ টাকার জোরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আর এটাই জনমনে আতঙ্কের কারণ। বস্তুত গণবিচ্ছিন্ন প্রার্থীরাই ক্ষমতা দখলে এমন পথ বেছে নেন।
মন্দ লোকের ক্ষমতাসীন হওয়া প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, তিনি বলেন, একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক মজলিসে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন। এমন সময় গ্রাম্য এক আরব সেখানে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কবে হবে? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জিজ্ঞাসার জবাব না দিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখলেন। ফলে উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ বলতে লাগল, নবী করিম (সা.) সে যা বলেছে শুনতে পেয়েছেন কিন্তু তার কথা তিনি পছন্দ করেননি। আবার কেউ কেউ বলল, আল্লাহর রাসূল তার কথা শুনতেই পাননি। এর পর বক্তব্য শেষ হলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখানে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যখন আমানতকে ধ্বংস করে ফেলা হবে, তখন কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করো। প্রশ্নকারী বলল, আমানত কিভাবে ধ্বংস হয়? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যখন অযোগ্য লোককে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হবে- তখন কিয়ামতের অপেক্ষায় থেকো। -সহিহ বোখারি
বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতার মসনদে মন্দ লোকদের সামাজিক উত্থান মূলতঃ কিয়ামতের আলামত। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত এক হাদিসে অাছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত অশ্লীলতা ও কৃপণতা বৃদ্ধি না পাবে, আমানতদার ব্যক্তিকে খেয়ানতকারি ও খেয়ানতকারিকে আমনতদার মনে করা না হবে এবং সমাজের সম্ভ্রান্ত (বুউল) লোক ধ্বংস না হবে ও ইতর শ্রেণির (তুহুত) লোকের উত্থান না হবে- ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! বুউল কি? আর তুহুত কি? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, বুউল হলো- সমাজের দর্পণ অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত শ্রেণির মানুষ, আর তুহুত হলো- ওই সমস্ত মানুষ; যারা মানুষের পায়ের নীচে অবস্থান করত, যাদেরকে মানুষ চিনত না। -আল মুজামুল আওসাত : ৩৮৯৩
সাধারণ মানুষের রায়ে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন, তাই সাধারণ মানুষের রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা একটি পবিত্র আমানত। এই আমানত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। যদি কেউ প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জনগণের ওপর জুলুম ও সন্ত্রাস পরিচালনার সুযোগ পায়- তাহলে তাকে ভোটদানকারীরা কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবেন এবং তার অপকর্মের দায়ভার রায়দানকারীদেরকেও কাঁধে নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে হজরত আওস ইবনে সুরাহবিল (রা.) বর্ণনা করেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জালেমকে (অত্যাচারী), সে জালেম একথা জানার পরও তাকে সঙ্গ দিয়ে শক্তি বৃদ্ধ করলো- সে ইসলামের গন্ডির বাইরে চলে গেলো। -মিশকাত ও তাফসিরে মাজহারি
আসন্ন নির্বাচনে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, এ প্রত্যাশা রইল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
এমএ