ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে বাঁচার আমল

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৬
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে বাঁচার আমল

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমবেশি সবার মাঝেই কাজ করে। এটা কোনো অপরাধের কারণে নয়, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও নয়; যে কোনো কারণে হতে পারে।

অফিসে কাজের চাপ, সংসারের চাপ, সম্পর্কে টানাপড়েন ইত্যাদি বিষয় থেকে মানুষের মাঝে উদ্বেগের জন্ম নেয়।

মনে জন্মানো এই উদ্বেগকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলে বা একে নিয়ন্ত্রণের কৌশল না জানলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে মনের ওপর। এর ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বেশি বিপদ, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে পথ চললে জাতির ওপর নেমে আসে নানা সঙ্কট ও বিপর্যয়।

তাই ইসলাম মানুষের এমন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা থেকে বাঁচতে বেশ কিছু পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। যেগুলো অনুসরণ করলে মানুষের অযথ উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দূর হবে।
 
যেমন আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, সম্পদ, প্রাণ ও ফসলের হানি করে পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, যাদের ওপর বিপদ আসলে তারা বলে, আমরা আল্লাহর জন্যই, আমরা তার দিকেই ফিরে যাব। তাদের ওপর তাদের রবের ক্ষমা ও রহমত অবতীর্ণ হয়। আর তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত। ’ -সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭

শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে উম্মতকে প্রবোধ দিয়ে বলেন, ‘মোমিনের বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্যের! তার প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। যদি সে সুখে থাকে শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর সে বিপদে পড়লে ধৈর্য ধরে, তা তার জন্য মঙ্গলজনক হয়। ’ –সহিহ মুসলিম

এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা অারও বলেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে। ’ -সূরা ইনশিরাহ : ৫-৬
 
আমাদের মনে রাখতে হবে, সব দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের পরেই আছে স্বস্তি ও শান্তি। যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রাখ, বিজয় ধৈর্যের সঙ্গে। শান্তি বিপদের সঙ্গে। আর কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি। ’

হাদিসে আরও এসেছে, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তার করুণা চাও, কেননা আল্লাহ তার কাছে চাওয়া ভালোবাসেন। আর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে আল্লাহর কাছ থেকে কষ্ট লাঘবের অপেক্ষা করা। ’ –তিরমিজি

সাহাবায়ে কেরাম তাদের পার্থিব জীবনে এরকম দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থাই অবলম্বন করেছে। সুতরাং এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, কষ্ট লাঘবের সবচেয়ে বড় উপায় ও স্বস্তির শক্তিশালী উপাদান হচ্ছে একনিষ্ঠ তওবা, সুদৃঢ় প্রত্যাবর্তন, অনুনয়-বিনয়, আনুগত্য ও নৈকট্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো জনপদেই তার অধিবাসীদের বিপদ ও কষ্ট দিয়ে পাকড়াও করা ছাড়া কোনো নবী প্রেরণ করিনি, যাতে তারা অনুনয়-বিনয় করে। ’ -সূরা আরাফ : ৯৪

সুতরাং আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া, তার সন্তুষ্টির পথে চলে আসা এবং তার অসন্তুষ্টি ও নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে থাকা মৃত্যুর পরে এবং পার্থিব জীবনে কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির মজবুত ভিত্তি। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য পথ তৈরি করে দেন। ’ -সূরা তালাক : ২

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। ’ -সূরা তালাক : ৪

তাই ব্যক্তি, সমাজ ও মুসলিম উম্মাহর উচিত হলো, বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে তাদের প্রতিপালকের প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করা। যে তার কাছে আশ্রয় নিয়েছে তিনি তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করেছেন। বিপদ ও সঙ্কটে নিরাপত্তার বেষ্টনী ও ভয়ভীতির মুহূর্তে মুক্তির রজ্জু মানুষের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নয়; বরং তা আল্লাহর ইবাদত বাস্তবায়ন, বিশুদ্ধ আকিদা ও তার মর্মবাণী অবলম্বন এবং কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

আল্লাহর চিরাচরিত বিধান হলো, তিনি বান্দাকে নানা বিপদ দেবেন তাকে তওবা ও তার প্রতি মনোনিবেশে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। সূরা সাজদার ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের বড় শাস্তির আগে ছোট শাস্তি ভোগ করাব। যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। ’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ছোট শাস্তি হলো দুনিয়ার বিপদাপদ, রোগব্যাধি, মৃত্যু এবং তাদের ওপর নেমে আসা অন্যান্য মুসিবত, যা দিয়ে আল্লাহ তার বান্দাকে পরীক্ষা করেন, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। ’ সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে আমাদের রবের কিতাব পড়তেন সেভাবে যদি আমরা পড়ি তাহলে আমাদের জীবনে বিস্ময়কর পরিবর্তন সৃষ্টি করে দেবেন।

হে মুসলমান! তোমাদের জাতি ভয়াবহ বিপদ ও কঠিন সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। সঠিক পথে ফিরে আসা, ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ, মুসলিম জীবনের পরিশুদ্ধি এবং মুসলিম সমাজের কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত সংস্কার ছাড়া এর কোনো উপশম ও নিরাময় নেই। তা হলো, ইসলাম ও নবীর পথনির্দেশ। মানুষ যতই এর বিকল্প চিন্তা করুক না কেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট বিষয় দিয়ে পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। ’ -সূরা আরাফ : ১৬৮

সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি দুশ্চিন্তা দূর করে ও বিপদ সরিয়ে দেয় তা হলো হৃদয়নিসৃত ভাষায় আল্লাহর জিকিরে লেগে থাকা। ‘আর আমি জানি, তাদের কথায় আপনার হৃদয় কষ্ট পাচ্ছে, আপনি আপনার রবের প্রশংসা করে তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনার রবের ইবাদত করুন। ’ -সূরা হিজর : ৯৭-৯৯

কোরআনের অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রাখুন, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই হৃদয়গুলো প্রশান্তি লাভ করে। ’ -সূরা রাদ : ২৮

গভীর চিন্তা, মনোনিবেশ ও মগ্নতা সহকারে কোরআন তেলাওয়াত করা সবচেয়ে বড় জিকির। মুখের ভাষায় ও বাস্তব পরিস্থিতির ভাষায় বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার মানবজীবনে প্রভূত কল্যাণ নিয়ে আসে এবং বিপদাপদ দূর করে। এ বিষয়ে অনেক আয়াত ও হাদিস আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইস্তেগফার করা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না। ’ -সূরা আনফাল : ৩৩

আর হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দা! আমি কি তোমাকে জান্নাতের রত্নভাণ্ডারগুলো থেকে একটি রত্ন-ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? তখন আমি বললাম, অবশ্যই হে রাসূল। তিনি বললেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ বল, কেননা তা জান্নাতের রত্নখনির অন্তর্ভুক্ত। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।