ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

রহমত ও বরকতের মাস মাহে রমজান

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৪
রহমত ও বরকতের মাস মাহে রমজান ছবি: প্রতীকী

রোজা ফারসি শব্দ। এর আরবি হচ্ছে সওম।

বহুবচন সিয়াম। অর্থ- বিরত থাকা।

ইসলামী শরীয়তে সওম হলো আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের প্রারম্ভ হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকা।

২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। আয়াতটি হলো-হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন-  তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে। সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫। পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্য থেকে কিছু হাদিস বর্ণিত হচ্ছে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় ও দোজখের  দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)। অপর হাদিসে হজরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। তারমধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)।

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাত্রিতে এবাদত করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রি এবাদতে কাটাবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।   (বুখারী, মুসলিম)।

আরো এসেছে, প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্ত্বার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরির সুঘ্রান হতেও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় দু’টি। যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)।

অপর একটি হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজা ও কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। বায়হাকী। হাদিস শরীফে আরো এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত্রি আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ।  

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রমজান মাস উপস্থিত হতো রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাঞ্চাকারীকে দান করতেন। বায়হাকী।

প্রিয় পাঠক! আমাদের উচিৎ রমজান মাসে এবাদত-বন্দেগি বাড়িয়ে দেওয়া। সাধ্যের মধ্যে সবচে’ বেশি দান করার চেষ্টা করা। রোজা রেখেও আমরা অনেকে অনেক অন্যায় করি। মিথ্যা বলি। অপরাধ করি। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়, নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও তদনুরূপ কাজ পরিত্যগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা দিয়ে (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকায়) আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। বুখারী । অর্থাৎ রোজা রেখে মিথ্যা বললে, অন্যায়-অপরাধ করলে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারের আশা করা যায় না। মহান আল্লাহ আমাদের রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে বেশি বেশি এবাদত-বন্দেগি করার তৌফিক দান করুন। আমিন।                     

লেখক: খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।