ঢাকা, সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ইসলাম

মক্কার মায়াবী কবুতর চত্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৩, জুলাই ১৪, ২০২৫

মক্কা (সৌদি আরব): কোথা থেকে, কবে এতো পাখি এসেছে কেউ জানে না। কিন্তু সবাই চেনে মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী মক্কার ‘কবুতর চত্বর’।

দিনে রাতে বিরামহীনভাবে শত শত ধুসর রঙের কবুতর খেলা করে চত্বরে। দেখতে আমাদের দেশের জালালী কবুতরের মতো।

মানুষে কাঁধে, শরীরে বসছে। বাচ্চারা কবুতরের পেছনে ছুটছে, শস্য দানা দিচ্ছে, মজা করে। আবার ছড়িয়ে দেওয়া দানা-শস্য পরম মমতায় খুটে খুটে খাচ্ছে কবুতরগুলো।

মসজিদুল হারামের বাইরেই মিসফালাহ এলাকায় অবস্থিত এ ‘কবুতর চত্বর’। ইবরাহিম খলিল সড়কের গোল চত্বর থেকে হিজরা রোডের শুরু পর্যন্ত কম-বেশি কোয়ার্টার কিলো মিটার এলাকা জুড়ে রাস্তার সর্বত্র কবুতরের রাজত্ব। কংক্রিট রাস্তা দখল করে দিব্যি ওড়াউড়ি করে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করে মুসল্লিরা। তবে তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কবুতরগুলোর, ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় না।  শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিয়ে নির্বিঘ্নে নিজের মনের আনন্দে অবস্থান করে কবুতরের ঝাঁক।

চত্বরে অনেকে প্যাকেটে করে বিক্রি করেন গম, যব, ভুট্টার দানা। সামান্য মূল্যে কবুতরের এসব খাদ্য কিনে মানুষ ছড়িয়ে দিচ্ছে চত্বরে। উড়ে এসে খেয়ে যাচ্ছে কবুতরের পাল। একদল পায়রা এক মাথা থেকে দানা খেয়ে উড়ে যাচ্ছে আরেক প্রান্তে। ডানায় রৌদ্রের রূপালি ঝিলিক তুলে আরেক দল এসে সেই খালি জায়গা পূরণ করে। আকাশ ঢেকে পায়রায় উচ্ছ্বল উড্ডয়ন দিগন্তে বিদ্যুতের চমক জাগিয়ে হাজার হাজার হাজি/মুসল্লিকে বিমোহিত করে।

কর্মসূত্রে বহু বছর এ এলাকায় বসবাস করেন, এমন কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কবে থেকে এখানে কবুতরের বসবাস, তা কেউ জানে না। কবুতরগুলো এই চত্বরের বাইরে অন্য কোনো এলাকাতেও যায় না। ঘুরে-ফিরে এখানেই থাকে। মানুষও এ কারণে জায়গাটির নাম দিয়েছে কবুতরের নামে।

তারা আরও জানান, এখানে অনেক ভাঙা-গড়া হয়েছে, নতুন অট্টালিকা ও রাজপথ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কবুতরগুলো এখানেই রয়ে গেছে। ভূমিরূপের নানা অদল-বদলে মানুষের স্থানান্তর হলেও কবুতরের দল জায়গা বদল করেনি।

আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হলো, পায়রাগুলো খুব বেশি উচ্চতায় ওড়ে না। বায়তুল্লাহর দিকেও যায় না। বায়তুল্লাহর প্রবেশের পথে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। বায়তুল্লাহতে হজ, ওমরাহ ও নামাজ আদায়কারীদের সঙ্গে খুবই আপনভাবে মিশে থাকে। মনে হয়, পবিত্র মসজিদে প্রবেশের পথে এ বিহঙ্গরা মানুষকে সাদরে সম্ভাষণ জানাচ্ছে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মানব প্রেমের মতোই প্রাণী প্রেম ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের। মানুষ তো বটেই, সামান্য কোনো পশু-পাখির কষ্টও সহ্য করতে পারেননি দরদি নবী (সা.)। প্রাণিকূলের প্রতি চরম মানবিক আচরণের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশু, পাখি, উদ্ভিদের প্রতি মানবিক ও কল্যাণময় আচরণের সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।

মক্কায় পাখির মতোই সানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক বেড়াল। নবীর নির্দেশে প্রার্থনারত মানুষ উপকারী প্রাণীদের জন্যও শান্তি ও নিরাপত্তার এক পরম নিকেতন স্বরূপ মক্কাকে দেখতে পাচ্ছে।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।