ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

ইসলাম

আজ পবিত্র হজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাতের ময়দান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:১৩, জুন ৫, ২০২৫
আজ পবিত্র হজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাতের ময়দান আরাফার ময়দান, সংগৃহীত ছবি

আজ (বৃহস্পতিবার, ৫ জুন) পবিত্র হজ। ভোর থেকে দলে দলে হজযাত্রীরা মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে হাজির হচ্ছেন।

আরাফাতের ময়দান মুখর হয়ে উঠেছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ ময়দানে অবস্থান করবেন বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বুধবার (৪ জুন) মিনায় অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা। সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরে হজের নিয়ত করে তারা মক্কা থেকে মিনায় যান। মিনায় নিজ নিজ তাঁবুর মধ্যে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করেন। আজ ফজরের নামাজ আদায় করেই তারা আরাফাতের ময়দানে যেতে শুরু করেন।  
লাখো কণ্ঠে আরাফাতের ময়দানে ধ্বনিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। ’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

পবিত্র হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ।

আরাফাতের ময়দান মক্কা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার, প্রস্থেও দুই কিলোমিটার। এ ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত।

আরাফাতে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। এ ময়দানে উপস্থিত হজযাত্রীদের উদ্দেশে খুতবা দেওয়া সুন্নত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানকার মসজিদে নামিরা থেকে বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
আরাফাতে অবস্থান হজের শ্রেষ্ঠ রুকন। কারণ আরাফাতের ময়দান যেন বিশ্ব সম্মিলন। লাখ লাখ হাজির এ ময়দানে মুসলিমদের একতার ইঙ্গিত বহন করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এ নামাজ আদায় করেছে আর এর আগে আরাফায় অবস্থান করেছে দিনে বা রাতে, তার হজ পূর্ণ হয়েছে এবং সে তার ইহরাম শেষ করেছে।  (সুনানে নাসায়ি)

আরাফাতের ময়দান থেকে মুসলিমদের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শান্তির বার্তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সুরা: মায়েদা, আয়াত: ৩)

আজ মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ। স্থানীয় সময় দুপুর ১২:১০ মিনিটে মানারাতুল হারামাইন (manaratal haramain) ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

এদিকে কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এ খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের মতো এবার বাংলাসহ ৩৪টি ভাষায় আরাফাতের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হবে।  

এ বছর ষষ্ঠবারের মতো বাংলা ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হচ্ছে। এবার খুতবার বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করবেন ড. মুহাম্মদ খলীলুর রহমান।

হজের অংশ হিসেবে জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ এ পাঁচদিনে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করে হজযাত্রীরা হজের কার্যক্রম পালন করবেন। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার (সৌদি আরবে ০৯ জিলহজ) আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে পড়া হবে। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-মোনাজাতে মগ্ন থাকবেন। সূর্যাস্তের পর সবাই আরাফাত থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে রাত্রিযাপন করবেন। শয়তানকে পাথর মারার জন্য মুজদালিফা থেকে তারা পাথর সংগ্রহ করবেন।

পরদিন রোববার (১০ জিলহজ) মিনায় জামারায় (জামারা হল হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ—এটি মিনায় অবস্থিত তিনটি নির্দিষ্ট পাথরের স্তম্ভ, যেগুলোকে প্রতীক হিসেবে ধরা হয় শয়তানের। হজের সময় হাজিরা এ তিনটি জামারায় ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করেন, যা শয়তানকে প্রতীকীভাবে প্রত্যাখ্যান করার অংশ হিসেবে পালন করা হয়। তিনটি জামারা হলো: ছোট জামারা, মধ্যম জামারা, ও বড় জামারা)

গিয়ে বড় শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হবে। এরপর কোরবানি করে মাথা ন্যাড়া করবেন হাজিরা। তখন ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে অনেকে আবার মিনার তাঁবুতে ফিরে যাবেন, অনেকে মক্কার বিভিন্ন হোটেলে থাকবেন। তবে যেখানেই হাজিরা থাকুন না কেন সেখান থেকে তারা দুই দিন বা তিন দিনের (১১ থেকে ১২ বা ১৩ জিলহজ) মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাকি দুই শয়তানকে (মধ্যম ও ছোট) সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।