ঢাকা, শনিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩১ মে ২০২৫, ০৩ জিলহজ ১৪৪৬

ইসলাম

লোক দেখানো আমল কোনো কাজে আসবে না

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪৬, মে ৩০, ২০২৫
লোক দেখানো আমল কোনো কাজে আসবে না

যে ইবাদত মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য নয়, বরং সমাজ ও মানুষকে দেখানোর জন্য। এ ধরনের ইবাদতের কোনো মূল্য নেই এবং এই আমল কোনো কাজে আসবে না।

এটি একটি নিকৃষ্ট মানসিকতার কাজ।

উল্লেখ্য, লোকে ভালো বলার জন্য, পরহেজগার বলার জন্য, মুমিন ভাবার জন্য এমন ইবাদত করা হারাম। আর তাই রিয়াকে আরেকভাবে গোপন শিরক ও বলা হয়।

মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ইবাদতের মধ্যে একটি ধূলিকণা পরিমাণ লোক দেখানো মনোভাব থাকলে আল্লাহ তাআলা ঐ ইবাদত কবুল করেন না’।

স্বয়ং রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে রিয়া নিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা সালাত আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৪২)

কেউ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো ইবাদত শুরু করার পরে যদি শয়তানের খপ্পরে পড়ে তার মানসিকতায় লোক দেখানো ভাব চলে আসে কিন্তু সে তা অগ্রাহ্য করে, ঘৃণা করে তার থেকে সরে আসার চেষ্টা করে, তাহলে তার সে ইবাদত শুদ্ধ হবে।

কিন্তু যদি তা না করে লোক দেখানো মনোভাব বজায় রেখে অন্তরে আনন্দ অনুভব করে, তাহলে তার আমল বাতিল হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর ইবাদত করার সময় তাই এই ধরনের মনোভাব যেন আসতে না পারে সে জন্য ইবাদতে একাগ্রচিত্তে দাঁড়ানো উচিত। যে ব্যাক্তি লোক দেখানো কাজ করবে কেয়ামতের দিন তাকে হে রিয়াকারি! হে বিশ্বাসঘাতক! হে অবাধ্য! হে ক্ষতিগ্রস্থ! এ ৪টি বিশেষ নামে সম্বোধন করা হবে। এরপর তাকে বলা হবে হে ধোঁকাবাজ! তোমার আমল সব বাতিল হয়ে গেছে, তোমার প্রতিদান নষ্ট হয়ে গেছে, আমার কাছে তোমার কিছু পাওনা নেই। তুমি যে উদ্দেশ্যে বা যার জন্য কাজ করেছ যাও তার কাছে গিয়ে তোমার পাওনা বুঝে নাও। (সহিহ আল বুখারি)

অনেক মসজিদে দেখা যায়, কেউ দান-খয়রাত করলে তার নাম প্রচার করা হয়। জুমার দিন দানকারী ব্যক্তিদের নামের তালিকা মাইকে বলা হয়। অথচ ইসলামে নির্দেশ আছে, তোমারা এমনভাবে দান করো যাতে ডান হাতে দান করলে বাম হাত টের না পায়।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গরীব, দুঃখী, মসজিদ, মাদরাসা, ফকির, মিসকিনদের দান করা অতি উত্তম ইবাদত, তবে তা প্রচার করতে হবে এমন কোনো কারণ নেই। প্রচার করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে এ ইবাদত রিয়াতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির সঙ্গে মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমল করবে তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘কেউ কখনো কোনো আমল করে এবং তাতে আমার সঙ্গে শরিক করে আমি তাকে ও তার আমল উভয়কে বর্জন করি’।

কেউ কোনো ইবাদত আরম্ভ করার পর বা মাঝে যদি কেউ এসে জায়, দেখে ফেলে তাহলে উল্লসিত হয়ে আরো সুন্দরভাবে ইবাদত করলে সে ইবাদত রিয়া বলে গণ্য হবে। মানুষের মুখে ইবাদতের প্রশংসা শুনে আনন্দিত হওয়া বা গর্ববোধ করাও রিয়া।

একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি। সাহাবিরা বললেন– ইয়া রাসূলুল্লাহ! ছোট শিরক কি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তা হলো ‘রিয়া’ বা লোক দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের পুরস্কার প্রদান করবেন, সেদিন রিয়াকারীদেরকে বলবেন- যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো, তাদের কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাও কিনা’? (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ ইবনে খুজায়মা ) এ হাদিস দ্বারা রোজ কেয়ামতের দিন রিয়াকারীর পরিণতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআন শরিফে আরো বলেন, ‘আমি (আল্লাহ্‌) ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য তারা যেসব আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেইগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব’। (সূরা: আল-ফুরকান, আয়াত: ২৩)

হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) শুনিয়ে দেবেন। আর যে লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) দেখিয়ে দেবেন’। (সহীহ বুখারী)

অনেককে দেখা যায় ইবাদত করে ফলাও করে প্রচার করতে। অনেকে দান-সদকা করে তা প্রচার করতে থাকেন। আমল সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। আমাদের দেশে রমজান মাসে হুড়োহুড়ি করে জাকাত নিতে গিয়ে মানুষ পদদলিত হয়। আবার হজে গিয়ে সেলফি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ ধরনের বিভিন্ন পদ্ধতি রিয়া ভাব জাগ্রত করে। আর যদি তা-ই হয়; তবে সে আমল কবুল হবে না। দুনিয়াবি লাভের উদ্দ্যেশ্যেও ইবাদতের চিন্তা আনা হারাম। এতেও কোনো লাভ হয় না।

ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত একটি বড় বিষয়। আমরা যখন কিছু করার মনস্থির করি তখন তাকে নিয়ত বলে। যদি নিয়ত পরিস্কার থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে সে ইবাদত কবুল হয়ে জাবে। যদি নিয়ত শুদ্ধ না হয় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয় তবে সে আমলের মূল্যায়ন নেই। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের বাহ্যিক আকৃতি এবং সম্পদের প্রতি তাকান না; বরং তিনি তাকান তোমাদের অন্তর এবং আমলের প্রতি’। (মুসলিম)

জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।