বিশ্বখ্যাত প্রাণী বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদী ড. জেন গুডঅল আর নেই। ৯১ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বক্তৃতার জন্য অবস্থানকালে তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
গুডঅল দীর্ঘ দশক ধরে তানজানিয়ার গোম্বে স্ট্রিম ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জির জীবন ও আচরণ অধ্যয়ন করে বিশ্বজুড়ে শিম্পাঞ্জি বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি এক ছেলে হুগো এবং তিন নাতি-নাতনিকে রেখে গেছেন।
গুডঅলের প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ড. গুডঅলের আবিষ্কারগুলি প্রাণীবিদ্যা বিজ্ঞানে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে এবং তিনি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য অবিরাম কাজ করেছেন।
গুডঅলের গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল শিম্পাঞ্জির ব্যক্তিত্ব, সামাজিক আচরণ এবং মানুষের সঙ্গে তাদের মিল–এসব বিষয়ের ওপর। তিনি দেখিয়েছেন যে শিম্পাঞ্জিরাও মানুষদের মতো আবেগপূর্ণ, হাস্যরসপূর্ণ এবং জটিল সামাজিক আচরণে নিয়োজিত।
আমরা শিম্পাঞ্জির সঙ্গে আমাদের মিল শিখেছি, যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে, ২০২০ সালে পিপল ম্যাগাজিনকে বলেছেন গুডঅল।
শিশু বয়স থেকে প্রাণীপ্রেমী
জেন গুডঅল ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মর্টিমার মোরিস-গুডঅল এবং মা ছিলেন লেখিকা মার্গারেট জোসেফ। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রাণীদের ভালোবাসতেন। ১০ বছর বয়সে তার আফ্রিকা যাওয়ার স্বপ্ন শুরু হয়।
তার মা তাকে উৎসাহ দেন এবং বলেন, যদি সত্যিই তুমি চাও, তুমি একটা পথ বের করবে। এতে প্রভাবিত হয়ে গুডঅল পরবর্তীতে আফ্রিকায় গিয়ে শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে বসবাস এবং তাদের নিয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন।
শিম্পাঞ্জি গবেষণার যাত্রা
১৯৫৭ সালে তিনি কেনিয়ায় যান এবং বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী লুইস লিকির সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ২৬ বছর বয়সে তানজানিয়ার গোম্বে যান শিম্পাঞ্জি অধ্যয়নের জন্য।
শুরুতে তিনি হাতি নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লিকির পরামর্শে শিম্পাঞ্জির ওপর মনোনিবেশ করেন। চার মাসের পর্যবেক্ষণের পর তিনি প্রথম চমকপ্রদ আবিষ্কার করেন। ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড নামের একটি শিম্পাঞ্জি ঘাস ব্যবহার করে টার্মাইট ধরে। এটি দেখিয়ে দেয় যে, মানুষই একমাত্র প্রাণী নয় যারা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে।
তার গবেষণা প্রমাণ করে, শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতো আবেগপূর্ণ, জটিল সামাজিক জীবনযাপন করে এবং নিজেদের ব্যক্তিত্বও রয়েছে।
শিক্ষা ও সাফল্য
১৯৬২ সালে গুডঅল তানজানিয়া ছেড়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন, যদিও তখন তার ব্যাচেলর ডিগ্রি ছিল না। পরে তিনি প্রাণীবিদ্যায় পিএইচডি করেন, যা কোনো ব্যাচেলর ডিগ্রিহীন প্রার্থীকে দেওয়া খুবই বিরল সুযোগ।
শিম্পাঞ্জির ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক আচরণের ওপর তার আবিষ্কারগুলো বৈজ্ঞানিক ধারণা বদলে দেয়।
মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষা
১৯৮০-এর দশকে গুডঅল লক্ষ্য করেন, শিম্পাঞ্জিদের বন্য অবস্থান থেকে তুলে সার্কাস বা চিকিৎসা গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে তিনি গোম্বে ত্যাগ করে এই শিম্পাঞ্জিদের রক্ষা ও মানবিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন।
তিনি ১৯৭৭ সালে জেন গুডঅল ইনস্টিটিউট এবং ১৯৯১ সালে রুটস অ্যান্ড শুটস প্রোগ্রাম শুরু করেন, যাতে তরুণদের পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা যায়।
গুডঅল জাতিসংঘের শান্তির দূতও ছিলেন (২০০২) এবং তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ২০২১ সালে তার বই The Book of Hope: A Survival Guide for Trying Times প্রকাশ করেন।
এমজেএফ