মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কৌশলগত শহর কিয়াউকফিউয়ের মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে গেছে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইরত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
এই শহরটি চীনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের কেন্দ্রস্থল, যেখানে রয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর ও গ্যাস পাইপলাইনের মতো বড় বিনিয়োগ।
আরাকান আর্মি যদিও কিয়াউকফিউ টাউনশিপের বিস্তৃত এলাকা তারা দখলে নিয়েছে। তবে পুরো শহরে এখনও আক্রমণ চালায়নি চালায়নি তারা।
জানা গেছে সরকার-নিয়ন্ত্রিত পুলিশ ব্যাটালিয়ন ৩২-এর নিকটবর্তী এলাকায় এখনও তীব্র লড়াই চলছে। জবাবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং যুদ্ধজাহাজ থেকে গোলাবর্ষণের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগ প্রকল্পসমূহের আশেপাশে তারা অতিরিক্ত সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ মোতায়েন করেছে এবং স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এদিকে, চীনকে ঘিরে উদ্বেগও বাড়ছে। এএ অভিযোগ করেছে, চীন জান্তাকে অত্যাধুনিক ড্রোন ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি, চীনা নিরাপত্তা কোম্পানির সদস্যরা ইতোমধ্যে কিয়াউকফিউয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমার সরকারের সদ্য পাস করা একটি বিতর্কিত আইন অনুযায়ী এসব বিদেশি কোম্পানিকে তাদের বিনিয়োগ রক্ষায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কিয়াউকফিউ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই গ্যাস ও তেলবাহী পাইপলাইন চীনের ইউনান প্রদেশে পৌঁছায়। এখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল—যার মাধ্যমে চীন মালাক্কা প্রণালীর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সরাসরি ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার পাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আরাকান আর্মি সম্ভবত এখন রাখাইনের বাকি যে তিনটি শহর এখনও জান্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে—তার সবকটিই দখলের পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ এবং রাজ্যের রাজধানী সিত্তে।
এদিকে যুদ্ধের কারণে কিয়াউকফিউ টাউনশিপ থেকে ইতিমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খাদ্য, ওষুধ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে দুর্দশায় পড়েছেন তারা। স্থানীয়রা মাছ ধরা বা বন থেকে খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন না, কারণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ল্যান্ডমাইন ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা। শহরের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় চিকিৎসার জন্যও ঘুষ দিতে হচ্ছে। পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, নিরাপত্তাহীনতা আর অনিশ্চয়তা প্রতিদিনই প্রকট হচ্ছে।
সূত্র: ইরাবতী
এমএম