ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই সপ্তাহের সময়সীমা দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি পুতিন তাকে ঘোরাতে থাকেন বা সময় নষ্ট করেন, তবে তিনি ভিন্নভাবে জবাব দেবেন।
বুধবার ওভাল অফিসে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি মনে করেন পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চান? এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি এমন মন্তব্য করেন। রাশিয়া গত কয়েক দিনে ইউক্রেনে হামলা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এটা এখনই বলতে পারছি না, তবে দুই সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেব। ” গত কয়েকদিন ধরে ট্রাম্প পুতিনের সমালোচনা করে যাচ্ছেন।
রোববার থেকে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা পোস্ট দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, পুতিন একেবারে পাগল হয়ে গেছেন এবং তিনি আগুন নিয়ে খেলছেন।
রাশিয়ার সাম্প্রতিক বোমাহামলাকে যুদ্ধের চার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও প্রাণঘাতী হামলাগুলোর মধ্যে একটি বলা হচ্ছে।
সপ্তাহান্তে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
বুধবার পর্যন্ত এসব হামলা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্য তার ক্রমবর্ধমান হতাশারই ইঙ্গিত দেয়। কেননা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিচুক্তির জন্য হোয়াইট হাউসের ধারাবাহিক চেষ্টা দিন দিন আরও নিষ্ফল হয়ে পড়ছে। এই প্রচেষ্টার মধ্যে রুশ-মার্কিন প্রেসিডেন্টের দুই ঘণ্টার ফোনালাপও রয়েছে।
ফোনালাপ শেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আলোচনা ‘খুব ভালো’ হয়েছে। আর পুতিন জানান, তিনি ‘ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির স্মারকলিপি’ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
শত শত ড্রোন এবং কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার আক্রমণ চালানোর এক সপ্তাহ আগে ফোনালাপটি হয়। রাশিয়া এখনো স্মারকলিপি তৈরি করেনি।
এ পর্যন্ত ট্রাম্পের হুমকি রাশিয়াকে আতঙ্কে ফেলেনি। এর আগেও ট্রাম্প এমন হুমকি দেন, কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু করেননি।
ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প কেবল ইউক্রেনের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেন। গত মার্চ মাসে কিয়েভের সঙ্গে মার্কিন সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি আট দিনের জন্য স্থগিত ছিল।
মার্কিন প্রশাসন এখনো প্রকাশ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো বড় ধরনের ছাড় বা সমঝোতার দাবি তোলেনি।
হোয়াইট হাউস মস্কোকে তোষণ করার অভিযোগ বা রাশিয়ার ওপর কঠোর অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
তারা জানিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেন আমলের সমস্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতামূলক প্রচেষ্টা ক্রেমলিকে দুর্বল করেনি বরং আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংস হয়েছে। দেশটির ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচভাগের একভাগ রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে ক্রিমিয়াও রয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ভূখণ্ডটি নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে।
শান্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য মস্কোকে অভিযুক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইস্তাম্বুলে আলোচনার পর রাশিয়া এখনো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শান্তি চুক্তি দেয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, প্রস্তাবের নথিটি ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে।
এমএইচডি