ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি টিকটক সিইও, প্রশ্নবানে জর্জরিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি টিকটক সিইও, প্রশ্নবানে জর্জরিত

টিকটকের প্রধান নির্বাহী (সিইও) শো জি চিউ গেল বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হন। সেখানে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে আইনসভার সদস্যদের একের পর এক প্রশ্নবান জর্জরিত হন টিকটক সিইও।

খবর বিবিসি।

এক কংগ্রেসম্যানের মতে এর চেয়ে দ্রুততম সময়ে কারো কারো ম্যারাথন দৌড়ও শেষ হয়ে যায়। মার্কিন সিনেটাররা এখন এমন একটি বিল এনেছেন, যেটি পাস হলে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টিকটকসহ যেকোন বিদেশি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাও চলে যাবে।

এর আগেও কংগ্রেসের সামনে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের হাজির হতে হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

তবে টিকটকের ক্ষেত্রে শুনানিতে যেভাবে একের পর এক আক্রমণাত্মক সব প্রশ্ন ধেয়ে এসেছে, তা আলাদা করে নজর কেড়েছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান কেউই এক্ষেত্রে ছাড় দেয়নি টিকটককে।

অ্যাপটির এক মুখপাত্র শুনানি শেষে বলেন রাজনীতিবিদরা আসলে লোক দেখানোর জন্য এমনটি করেছে। শুনানিতে সাড়ে ৪ ঘণ্টার একঘেয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে আমরা অবশ্য দু-একটি নতুন জিনিসও জানতে পেরেছি।

চিউয়ের সন্তানেরা টিকটক ব্যবহার করে না

শুনানির এক পর্যায়ে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের এক নারী সদস্য ন্যানেট ব্যারাগান চিউকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, তার সন্তানেরা টিকটক ব্যবহার করে কি না।

চিউয়ের উত্তর না, তারা করে না, কারণ তারা সিঙ্গাপুরে থাকে। আর ওই দেশে ১৩ বছরের নিচে শিশুদের উপযোগী টিকটক ভার্সন নেই।

এরপর তিনি পরিষ্কার করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাপের এই ভার্শনটি আছে এবং তার সন্তানেরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে, তাহলে তিনি তা তাদের ব্যবহার করতে দিতেন।

চীনে বাইটড্যান্সের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে

শুনানিতে চিউ বারবার ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’-এর কথা উল্লেখ করেন। যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রেই জমা রাখা হয়। আর এই প্রজেক্টের দেখাশোনার দায়িত্বে অ্যামেরিকান কোম্পানি ওরাকল।

কিন্তু এই প্রজেক্ট টেক্সাস এখনো পুরোপুরিভাবে কাজ করছে না। তাই এখন পর্যন্ত চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলীদের কাছে তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে বলে নিশ্চিত করেন চিউ।

তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক আন্তঃকার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল, চীনের প্রকৌশলীদের তাই তথ্যে প্রবেশাধিকার রযেছে।

এই স্বীকারোক্তির বিষয়টা নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলতে থাকতে রাজনীতিবিদরা। তাদের যুক্তি হলো যদি চীনের প্রকৌশলীরা তথ্য পেয়ে থাকে, তাহলে সেখান থেকে চীনের সরকারের তথ্য না পাওয়ার কারণ নেই।

বাইটড্যান্স হলো টিকটক অ্যাপটির নির্মাতা একটি চাইনিজ প্রযুক্তি কোম্পানি।

বাইটড্যান্সে চিউয়ের মালিকানা আছে

শুনানিতে চিউয়ের নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে যে জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পায়, সেটা সম্ভবত বাইটড্যান্সের সঙ্গে টিকটকের দূরত্ব প্রমাণে।

যেকোনোভাবেই বলা হোক না কেন চাইনিজ কোম্পানিটিই টিকটকের মালিক। চিউ নিজেও একসময় বাইটড্যান্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ছিলেন।

যখন শুরুতে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন মি. চিউ বলতে চাননি যে তিনি বাইটড্যান্সের মালিকানার অংশীদার ছিলেন কি-না।

কিন্তু আইনপ্রনেতাদের চাপে একসময় তিনি বলেন, হ্যাঁ তিনি ছিলেন। কিন্তু একইসঙ্গে এই যোগাযোগকে তিনি ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিষয়টি কী?

চিউ সাধারণত কংগ্রসের দিকে কোনো পাল্টা আক্রমণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। কিন্তু কিছু দুর্লভ মুহূর্তে তিনি তা ভালোভাবেই করতে সফল হন।

ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে টিকটক কী করে এমন প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে তিনি বলেন, “সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলোরও কিন্তু তথ্য সংরক্ষণের খুব ভালো রেকর্ড নেই....শুধুমাত্র ফেসবুক আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই দেখুন।  

তার এই মন্তব্যের পেছনে অবশ্য যুক্তি আছে। ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও আরেকটি থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ২০১৮ সালে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।

আইনপ্রণেতারা টিকটকের বিরুদ্ধে একজোট

শুরু থেকেই টিকটকের বিরুদ্ধে দুই দল এক হয়ে সমালোচনা করতে থাকে, একইসঙ্গে যে রকম সন্দেহ আর অবিশ্বাস দেখা যায় সব পক্ষ থেকে সেটা ছিল খুবই ভয়াবহ।
 
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার বলেন, কংগ্রেস ইতিহাসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগত
 
আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ড্যান ক্রেনশ বলেন, চিউ, আপনাকে ধন্যবাদ, রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্য।

শুনানি শেষে টিকটক অভিযোগ করে, তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে খুবই কমই নজর দেওয়া হয়েছে।

টিকটক ওয়াশিংটনে লবিংয়ের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে তাদের আরেও প্রচুর ডলার এতে খরচ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।