ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড শুরু শুক্রবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২১
আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড শুরু শুক্রবার

ঢাকা: তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রতি বছরই বিশেষভাবে আয়োজিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড’। হংকং থেকে শুরু হওয়া বহুল প্রত্যাশিত এই অলিম্পিয়াড এবারই প্রথম হংকংয়ের বাইরে বাংলাদেশে আয়োজিত হতে যাচ্ছে।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) থেকে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড শুরু হবে। এবারের আয়োজক বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে এই বিশেষ আয়োজনকে ঘিরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) একটি সংবাদ সম্মেলন করে। বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুল মান্নান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১- এর চেয়ারম্যান এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন হংকং ব্লকচেইন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স মা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এর প্রতিটি ফল বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ভোগ করতে পারছে। গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে আইসিটি খাত এর চারটি পিলার শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। দেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি পৌঁছে গেছে।

তিনি বলেন, দেশে সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। যারা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছেন। সারাদেশে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও বিপিও সেক্টরে ১৫ লাখ তরুণ-তরুণীরা কাজ করে আইসিটি শিল্পের অবদান রাখছে।

তিনি আরও বলেন, গত ১২ বছরে ১৫ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। সরকারের ৫২ হাজার ওয়েবসাইট ১৫ হাজার সেবা দিচ্ছে। আইসিটি শিল্প ১২ বছর আগে মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলারে ছিল বর্তমানে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

পলক বলেন, আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দিষ্ট টার্গেট দিয়েছেন সেটা হলো, এখন যে সাড়ে তিন শো বিলিয়ন ডলারের জিডিপি এটা ২০৩১ সালে হবে ৭০০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৪১ সালে এক ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এখন আমাদের পোশাক শিল্প থেকে আয়, আমাদের প্রবাসী কর্মীদের আয়, কৃষি ও অন্যান্য যেসব শ্রমনির্ভর অর্থনীতি শিল্প রয়েছে সেগুলোর সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনা চান, একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ও একটি প্রযুক্তি-নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে। আর এসব কিছুর জন্য আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। আর সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি ‘ব্লকচেইন প্রযুক্তি’।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের স্টার্টআপরা অনেক সফলতা পাচ্ছেন এবং প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে বিদেশি বিনিয়োগ এনেছে গত ৫ বছরে। ব্লকচেইন হতে পারে বাংলাদেশের বিনিয়োগের অন্যতম একটি প্রযুক্তি খাত।  

তিনি আরও বলেন, ব্লকচেইনকে উৎসাহিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ব্লকচেইনকে তাদের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ব্লকচেইনের মত একটি ভবিষ্যতমূখী প্রযুক্তি সম্পর্কে যাতে এই দেশের কিশোর-কিশোরিরাও জানতে পারে সেই জন্য আমরা শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব আরও নতুন করে আরও ৫ হাজার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি এবং পরবর্তী পর্যায়ে আরও ১০ হাজার পরিকল্পনা আছে। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের শিশু-কিশোরীদের ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তিতে সক্ষম করে গড়ে তুলতে দেশে অত্যাধুনিক শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। দেশে ইতোমধ্যে আট হাজারটি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আরও পাঁচ হাজারটি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ৩০০টি ‘স্কুল অব ফিউচার’ স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও আগামীতে আরও ১০ হাজারটি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে আরও ৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।  

পলক বলেন, আজকের যারা শিশু, তারাই হবে ২০৪১ সালের লিডার। প্রতিটি সেক্টরে তারাই নেতৃত্ব দেবে। আজকের শিশু প্রজন্মকে আমরা যেভাবে গড়ে তুলবো, ২০৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ সেভাবেই গড়ে উঠবে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ন্যাশনাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশ এর বিজয়ী ১২টি দল এই আয়োজনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এবং সফলতা।

বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড হলো একটি গ্লোবাল কম্পিটিশন। এটা আয়োজন করা আমাদের জন্য সত্যিই খুব সম্মানজনক। তিনি এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

হংকং ব্লকচেইন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স মা বাংলাদেশকে এই “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড (আইবিসিওএল) সফলভাবে আয়োজনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তিগত সমাধান পাওয়া সম্ভব।

আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” এর চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ এন করিম আয়োজকসহ সবাইকে এই আয়োজনে পাশে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশ্বে ব্লকচেইন প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এবং প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য, প্রতি বছর আন্তর্জাতিকভাবে এই আয়োজনটি করা হয়। তিনি এই আয়োজনের সব অংশগ্রহণকারীদেরও ধন্যবাদ জানান।

আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অনুপ্রেরণামূলক ক্ষমতায়ন এবং উদ্ভাবন। এটি একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম যেখানে তারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশ পর্বে “ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ২০২১” -এর বিজয়ী ১২টি দল এই আয়োজনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে। বিজয়ীদের জন্য সর্বমোট ৪০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ এই ইভেন্টে বিচারক এবং বক্তা হিসেবে সংযুক্ত হবেন। এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় মোট ১২টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। দেশগুলো হলো চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ থেকে মোট ৫০টিরও বেশি দল অংশগ্রহণ করছে। ইভেন্টটিতে যোগ দিতে https://ibcol2021.com/ এ ভিজিট করতে হবে।  

মূলত আগামী ৮ অক্টোবর (শুক্রবার) একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১” এর যাত্রা শুরু হবে। ৩ দিনব্যাপী এ অলিম্পিয়াড চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। এ বছর অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি মোট ৪টি সেমিনারের আয়োজন থাকছে। সেমিনারগুলো হবে সিবিডিসি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি, ই-গভর্নেন্স, আইডেন্টিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি এবং ফিনটেক বিষয়ে। অনুষ্ঠানসহ সেমিনারগুলো আইবিসিওএল-এর ওয়েবাইসাইট (https://ibcol2021.com) -এই ঠিকানায় বিশ্বব্যাপী সব অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল-সহ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ১ম বারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১ আয়োজন করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২১
এমআইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।