ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

ওয়্যারলেস রেখে ক্যাবলে ঝুঁকছে বিটিসিএল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
ওয়্যারলেস রেখে ক্যাবলে ঝুঁকছে বিটিসিএল

ঢাকা: পরিকল্পনা কমিশনের মতামত উপেক্ষা করে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট রেখে ফাইবার ক্যাবলের পিছনে ঝুঁকছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এতে করে সরকারের অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।



ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্প চলমান থাকা সত্ত্বেও দূর্গম এলাকায় ১ হাজারটি ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিটিসিএল পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ে নির্ভরযোগ্য ও সহজলভ্য তথ্য যোগাযোগের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক অধিক সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী। এছাড়া জনগণ খুব সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবে। এটি বর্তমানে সারাদেশে বাস্তবায়নাধীন। এরপরও বিটিসিএল অহেতুক অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের পিছনে ছুটছে।

তবে এই প্রকল্পের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মনজির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি দেশব্যাপী বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট প্রসারে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে তবে ডিপিপি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

প্রকল্পটি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের দ্বিমত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের মত ভিন্ন থাকতে পারে। তবে যথার্থভাবেই প্রকল্পটি পাঠানো হয়েছে।

বিটিসিএল ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে কোনো উন্নয়ন সহযোগী অর্থায়ন করতে রাজি হয়নি। সব টাকা সরকারি খাত থেকে মেটাতে হবে।

২০১২ সালের সিডিউল অব রেটস ভিত্তিতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সংযোগ ও যন্ত্রপাতি বাবদ খরচ হবে এক কোটি ৮ হাজার টাকা। তবে বর্তমান মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বিবেচনা করলে প্রতিটি ইউনিয়নে পরিষদে সংযোগ বাবদ খরচ দাঁড়াবে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

অপরদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কোরিয়া সরকারের সহায়তায় প্রায় ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে জিওবি ৩৪৪ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৬১২ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতির এবং পরামর্শক বাবদ ব্যয় প্রকল্প সাহায্য থেকে নির্বাহ করা হবে।

অন্যদিকে ৪জি এলটিই সংযোগ নেয়ার জন্য বিটিআরসি থেকে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ কেনার জন্য জিওবি খাতে ২১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

অপরদিকে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের সকল উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করে খুলনা ক্যাবল শিল্প সংস্থায় তৈরি করা হয়।

যা বিটিসিএল একক উৎসের ভিত্তিতে কিনে থাকে। সকল ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

এরপরও অতিরিক্ত লাভের আশায় অহেতুক ব্রডব্যান্ড ছেড়ে ফাইবার ক্যাবলে ছুটছে বিটিসিএল।

ব্রডব্যান্ড ছেড়ে ফাইবার ক্যাবলের পিছনে না দৌড়ানোর জন্য নানা যুক্তি উপস্থাপন তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে এতে সাড়া দেয়নি বিটিসিএল। অপরদিকে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করার জন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগী পাওয়া যায়নি।

প্রকল্পের সব অর্থ সরকারের পক্ষ্যে ব্যয় করাও কঠিন। পরিকল্পনা কমিশনের মতামত অনুযায়ী ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগে নানা ধরনের সুবিধা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, প্রত্যন্ত অঞ্চল, দূর্গম এলাকা ইত্যাদির জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টানেট প্রদান বিশ্বে একটি সাশ্রয়ী এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। একটি বিটিএস টাওয়ারের মাধ্যমে ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে বসবাসরত জনগণ এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। ঘনবসতি অথবা বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাসরত ব্যক্তিদের কভারেজ আওতায় আনার জন্য চাহিদার ভিত্তিতে নতুন টাওয়ার স্থাপন করা সহজ।
 
অপরদিকে ওয়্যারলেস ব্র্যান্ডউইথ একটি চিরস্থায়ী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে। এটি মোবাইল নেটওয়ার্কের ন্যায় নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনে নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরে।

এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ নিচু এলাকা এবং নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বর্ষাকালে অধিকাংশ এলাকাই পানিতে ডুবে যায়। অসংখ্যা নদী,খাল ও বিল ইত্যাদি থাকায় অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগে ব্যয় অনেক বেশি হবে।

অপরদিকে সড়ক-জনপথ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক রাস্তা উন্নয়নের সময় প্রশস্ততা বাড়ানো হয়।
এতে রাস্তার পাশে স্থাপিত অপটিক্যাল ক্যাবল ফাইবারগুলো প্রতিস্থাপন করতে হয়।

সাধারণভাবে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ১৫ থেকে ২০ বছর পর অকেজো হয়ে পড়ে এবং তা পুনরায় প্রতিস্থাপন করতে হয়।
উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পরিষদে সংযোগ দেওয়া হলে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার জন্য যে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রয়োজন তা বিটিসিএল’র নেই।

তাছাড়া, প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে কোনো ইউনিয়নের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা সময়মত মেরামত করা সম্ভব হবে ‍না।

সর্বোপরি এক থেকে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আইসিটি সুবিধা স্থাপন করা হলেও অন্যান্য স্থাপনা স্কুল, কলেজ, সরকারি স্থাপনাসহ প্রতিটি বাড়িতে এই পদ্ধতিতে সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ১৫ থেকে ২০ বছর পর অকেজো হয়ে পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মনজির আহমেদ বলেন, প্রযুক্তি সব সময়ই পরিবর্তনশীল। ১০ বছর পর হয়তো দেখা যাবে নতুন কোনো প্রযুক্তি। সুতরাং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী কোনো চিন্তা করা যায় না।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা বিটিসিএল এর রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।