ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন: বাংলাদেশ পর্ব আয়োজন করলো বেসিস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন: বাংলাদেশ পর্ব আয়োজন করলো বেসিস

ঢাকা: নবম বারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর উদ্যোগে ও বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহযোগিতায় নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সফলভাবে শেষ হয়েছে।  

গত ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ হ্যাকাথন চলে একটানা ৩৬ ঘণ্টা।

শনিবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীতে ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) অডিটোরিয়ামে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, বিশেষ অতিথি ছিলেন আইইউবির উপাচার্য প্রফেসর তানভীর হাসান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এর আহ্বায়ক তানভীর হোসেন খান বলেন, এবার দেশের নয়টি শহর থেকে দুই হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। সেখান থেকে বাছাইকৃত ২১০টি প্রকল্পের মধ্যে হাইব্রিড মডেলে শীর্ষ ৫০টি প্রকল্প নিয়ে আইইউবিতে সরাসরি এবং বাকি ১৬০টি প্রকল্প নিয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী হ্যাকাথন। আমরা গত তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি এবং আমি বিশ্বাস করি এ গৌরবের ধারা অব্যাহত থাকবে।  

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার বলেন, এটা অসাধারণ যে বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়নি। আপনাদের নিজেদের নিয়ে আপনাদের গর্ব করা উচিত। আমি পরের বছর আবারও আপনাদের মধ্য থেকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী দল দেখতে চাই। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে আপনাদের এ বিস্ময়কর সাফল্যের জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।  

আইইউবির উপাচার্য প্রফেসর তানভীর হাসান বলেন, এ ইভেন্টটি শুধুমাত্র আমাদের দেশের তরুণদের জন্যই নয় বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উৎকর্ষ সাধনের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সর্বদা মানুষের অগ্রগতির অগ্রভাগে রয়েছে। আমরা যে বিশ্বে বাস করি সেটিকে আকার দিয়েছে এবং মানবতার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে। আমরা বর্তমানে একটি নতুন শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। যেখানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, শিল্প এবং সমাজকে নতুন আকার দিচ্ছে। এটি সর্বোপরি আমাদের তরুণদের আগামী দিনের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হলো একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম যা শুধুমাত্র উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে না বরং আমাদের তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি শেখার আগ্রহ জাগায়। এটি সৃজনশীল এবং স্বাধীন চিন্তা শক্তি প্রয়োগের উপযুক্ত স্থান। বেসিস টানা নবম বারের মতো এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় আমি তাদের প্রশংসা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ ধারাবাহিকতা আমাদের তরুণদের উজ্জীবিত করবে এবং চতুর্থবার বিশ্বজয় করবে বলে আমি আশা করি।  

সমাপনী বক্তব্যে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর মতো উদ্যোগগুলো আমাদের শিক্ষাগত প্রচেষ্টাকে পরিপূরক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণদের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে যা পাঠ্যপুস্তক এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে। তরুণ মনকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবং বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের বাস্তবধর্মী সমাধান করে আগামী দিনের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবক হওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে। এটি আমাদের তরুণদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে, উত্তর খুঁজতে এবং মহাবিশ্বের বিস্ময়কে জানতে উৎসাহিত করবে। স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা নতুন দিগন্তের দরজা খুলে দিচ্ছি। এর মাধ্যমে মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি এবং উদ্ভাবন উভয় ক্ষেত্রেই সক্ষমতার জানান দেওয়া হচ্ছে।  

আয়োজকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, এরই অংশ হিসেবে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের নয়টি শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজন করেছে। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার এক কোটি শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি দুই লাখ শিক্ষার্থীর সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।  

২০১৮ সালে ‘লুনার ভিআর প্রজেক্ট’ বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এমন ভার্চ্যুয়াল অ্যাপ্লিকেশন ফুটিয়ে তুলে ধরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম অলীক’। ২০২১ সালে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত দল ‘টিম মহাকাশ’। ২০২২ সালে টিম ডায়মন্ডস সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এসব সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা, প্রতিভা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।  

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর বিজয়ী:

ঢাকা- উইনার: টিম রুবাস্ট, রানার্স-আপ: টিম অ্যাস্ট্রোটাইটান্স, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম এক্লিপ্সো, চট্টগ্রাম- উইনার: টিম আলফা, রানার্স-আপ: টিম তুখোড়, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম প্লেক্সাস, রাজশাহী- উইনার: টিম ভয়েজার্স, রানার্স-আপ: টিম এরর ৪০৪, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম মার্স মার্ভেল, কুমিল্লা-উইনার: টিম হাইব্রিড, রানার্স-আপ: টিম এজফ্লাই, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম মুনর‍্যাকার্স, সিলেট- উইনার: টিম এক্লিপ্সিয়া, রানার্স-আপ: টিম প্রস্ফুট, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম অ্যাস্ট্রোগ্লাইড, খুলনা- উইনার: টিম স্টর্ম ট্রুপার্স, রানার্স-আপ: টিম মহাকর্ষ, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম অনির্বাণ, বরিশাল-উইনার: দ্য টাইটানস, রানার্স-আপ: ইয়োট্টাবাইট, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম স্পেস আলকেমিস্টস, রংপুর-উইনার: টিম রিকার্শন, রানার্স-আপ: দ্য স্পেস স্কোয়াড, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম গ্যালাক্টিক গ্ল্যাডিয়েটরস, ময়মনসিংহ-উইনার: টিম ইনসেপশন লাস্ট হোপ, রানার্স-আপ: টিম সোলারসেন্টিনেল, দ্বিতীয় রানার্স-আপ: টিম লুনার অ্যালাইস।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।