ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

নারদাকাণ্ডে মমতার মন্ত্রীদের থাকতে হবে গৃহবন্দি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২১
নারদাকাণ্ডে মমতার মন্ত্রীদের থাকতে হবে গৃহবন্দি

কলকাতা: নারদাঘুষ কাণ্ডে পরিবহনমন্ত্রী ফিরাদ হাকিম, গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র ও সাবেক কলকাতা মেয়র শোভন চ্যাটার্জিকে জেল থেকে মুক্তি দিলেও মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে গৃহবন্দি। বাইরে বের হয়ে কোনো কাজ করা যাবে না।

কলকাতার হাইকোর্টে দু’দিন ধরে চলা শুনানির পর শুক্রবার (২১ মে) ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এমনই রায় দিয়েছেন।

বুধবার (১৯ মে) হাইকোর্টে সিবিআইয়ের তরফে উকিল তুষার মেহেতা বলেন, এখানে সন্ত্রাসবাদীরা হুমকি দিচ্ছে। সিবিআইকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মামলার কাজ চালিয়ে যেতে গেলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। মামলা ভিনরাজ্যে স্থানান্তরিত করা হোক। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায় জানতে চান মামলা চলাকালীন অভিযুক্তরা কি কাজে অসহযোগিতা করেছে? মহামারিকালে এই চারজনকে জেলে রাখার খুব প্রয়োজন কি?

উত্তরে সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, এনারা কেউ জেলে নেই, হাসপাতালে রয়েছে। এছাড়া বলেন, ঘটনার দিন মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই দপ্তরে ঢুকে কাজে বাধা দেন। নিঃশর্তভাবে চারজন হেভিওয়েটকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। এমনকী ১৭ মে রাজ্যের আইনমন্ত্রী শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকেন আদালতে। মামলাকে প্রভাবিত করছেন তারা।

চার নেতার তরফে সওয়াল করেন অভিষেক মনুসিঙভি। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থায় কেউ বাধা দেয়নি। গোপনভাবে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। আমাদের জানানো হয়নি। বিধায়ক-মন্ত্রীদের গ্রেফতারের আগে মুখ্যমন্ত্রী বা বিধাসভা অধ্যক্ষকে জানানো হয়। সিবিআই জানায়নি, শুধু রাজ্যপালের অনুমোদনে গ্রেফতার করেছে তারা। জবাবে সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে তিনবার সরকারিভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কোনো উত্তর আসেনি।

হাইকোর্টের বিচারপতি অভিযুক্তদের উকিলের কাছে জানতে, মুখ্যমন্ত্রী কোনো সিবিআইয়ের দফতরে গিয়েছিলেন। তিনিতো রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। সিবিআই-তো রাজ্যের বিষয় নয়? এবং কেনো আইনমন্ত্রী মামলা চলাকালীন আদালতে হাজির থাকবেন? কেনো সিবিআইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবে তৃণমূল কর্মীরা? এর দায় কার? জবাবে সিঙভি বলেন, মামলা ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। উপস্থিত থাকা আর নারদা মামলা দুটো ভিন্ন। উপস্থিত থাকা নিয়ে আলাদা মামলা হতে পারে।

সিঙভি মুম্বাই তারকাদের উদাহরণ টেনে বলেন, কর্মীরা আবেগবশত করে ফেলেছে। যেমন সালমান খান বা সঞ্জয় দত্তের বেলা হয়েছিল।

এরকম নানা বাদানুবাদের পর বুধবার স্থগিত হয়ে যায় আদালত।

এরপর শুক্রবার (২১ মে) হাইকোর্টে বিশেষ মামলায় রায় নিয়ে দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ শুরু হয়। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায় অন্তর্বর্তী জামিনের পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল পক্ষে থাকেন জেল থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি থাকতে হবে। যতদিন না মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। অভিযুক্তদের পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে সিবিআইকে। চারজন নেতার চিকিৎসার পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।  

এরপরই চার নেতার আইনজীবী বলেন, গৃহবন্দি কেনো অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হোক। রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতিতে ফিরহাদ হাকিম পুরসভায় যেতে না পারলে অতিমারিতে কাজ করবে কীভাবে?

তবে আপাতত গৃহবন্দিতেই সিলমোহর পড়লো। পাশাপাশি মামলা গেলো তৃতীয়পক্ষের হাতে। সেই রায় না আসা পর্যন্ত চার অভিযুক্তকে থাকতে হবে গৃহবন্দি। তবে ভার্চ্যুয়ালি কোভিড পরিস্থিতির কাজ করা যাবে।

গত সোমবার (১৭ মে) সকালে নারদা ঘুষকাণ্ড মামলায় রাজ্যের ৪ নেতামন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তাদের নিয়ে আসা হয় কলকাতার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর নিজাম প্যালেসে। তার কিছু পরে দফতরে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সরাসারি সিবিআই কর্তাদের বলেন, আমার মন্ত্রীদের গ্রেফতার করলে আমাকেও গ্রেফতার করতে হবে।

এরপরই টানা ছয় ঘণ্টা সিবিআই অফিসে বসে থাকার পর বের হয়ে যান তিনি। গোটাদিন রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সন্ধ্যায় নিম্ন আদালত (ব্যাঙ্কশাল কোর্ট) জামিনের রায় দেন চারজনকে।

নিম্ন আদালতের রায়ে ধাক্কা খাওয়ার পর ওইদিনই হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করে সিবিআই। সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, দিনভর যেভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দফতর নিজাম প্যালেসের সামনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি হয়েছে, তদন্তকারীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে তাতে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে বসে তদন্ত চালানো সম্ভব নয়। অন্য রাজ্যে এই মামলার শুনানির আবেদন করে সিবিআই। তারপরই জামিন না মঞ্জুর করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই রাতেই চারজনকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে। এদিন হাইকোর্ট তারই রায় দেওয়া হয়।

২০১৬ সালে মমতার সরকারের ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়, মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারী সহ ১৩ জনকে গোপন ক্যামেরার সামনে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই ২০১৭ সালে নারদাকাণ্ডে তদন্তভার পায় সিবিআই। তারপর থেকেই মামলা চলছে। এর পাশাপাশি শুভেন্দুসহ বাকিদের গ্রেফতারের জন্য বুধবারই রাজ্যেকে চিঠি দিয়েছে সিবিআই। যা নিয়ে নারদা ঘুষকাণ্ড ফের একবার রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২১
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।