ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

বুদ্ধবাবুর ভোটবার্তায় অক্সিজেন পেলো বামেরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২১
বুদ্ধবাবুর ভোটবার্তায় অক্সিজেন পেলো বামেরা

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে বামদের অক্সিজেন দিয়ে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের কাণ্ডে সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অসুস্থ বুদ্ধবাবু বাড়ি থেকে বের হতে না পারলেও ভোটের সব খোঁজখবর রাখছেন।

বাড়িতে বসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথার জের টেনে এমন এক বিবৃতি দিলেন তাতে অনেকটাই স্বস্তিতে বাম-কংগ্রেস-আব্বাস জোট সংযুক্ত মোর্চা।

২০০৭ সালে ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৭ আন্দোলনকারী। তারপরই সেদিনের বিরোধীনেত্রী মমতাসহ সরব হয়েছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। বলা হয়েছিল, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর নির্দেশেই গুলি চলেছিল। সেদিন বুদ্ধবাবু তার বিবরণীতে বারে বারে বলেছিল পুলিশ গুলি চালায়নি। বহিরাগতরা পুলিশের পোশাকে ভিড়ে ঢুকে এ ধরনের কাজ করেছিল। যা নিয়ে মমতার আমলেই আদালত বুদ্ধবাবুকে নির্দোষ রায় দিয়েছিল।

সেই অভিশপ্ত ঘটনার বিষয় গত রোববার (২৮ মার্চ) নন্দীগ্রামে এবারের নির্বাচনী প্রচারে শোনা গেলো মমতা ভাষণে। দলত্যাগী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ১৪ মার্চ পুলিশের পোশাক পরে যারা নন্দীগ্রামবাসীর ওপর গুলি চালিয়েছে তারা শুভেন্দুর লোক। সিপিএম এর কিছু দালালের সঙ্গে চক্রান্ত করে গুলি চালানোর পরিকল্পনা করেছিল অধিকারী পরিবার। যদিও এর পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দু বলেছেন, ওনার মাথার ঠিক নেই। মেন্টাল হাসপাতালে পাঠানো উচিত।

এটা স্বাভাবিক শিল্প বিরোধীতায় বামদেরই একাংশ হাত মিলিয়েছিলো বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে। যা অনেকেই পরে বুঝেছিল। তবে আজ তা ইতিহাস। এরপরই সরব হয়েছেন বামেরা। তাদের যুক্তি আজ যার দিকে মমতার নিশানা করছেন সেই এতদিন তারই লোক ছিল। তাই চক্রান্তকারীদের ভোট নয়। তারমধ্যেই এক লিখিত বিবৃতি দিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকে আমরা যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভাবনা থেকে এগিয়েছি, তা হল কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা সেই পথেই এগিয়েছি। কিন্তু গত ১০ বছরে রাজ্যে কৃষি পিছিয়েছে। উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্প আসেনি এ সময়ে। শিল্পের বিষয়ে দুই সম্ভাবনাময় জায়গা সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের নিরবতা। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। বাংলার যুবসমাজ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে। সরকারি ক্ষেত্রেও কোনো নিয়োগ নেই। যে মেধা ও কর্মদক্ষতা বাংলার সম্পদ, তা রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। যুব সমাজের স্বপ্ন চুরমার হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গন কলুষিত হচ্ছে। নারীদের নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা আজ দুস্কৃতিদের দৌরাত্ম্যে বিপন্ন। দুর্নীতি-তোলাবাজি-সিন্ডিকেটরাজ জীবনধারণ দুর্বিষহ করে তুলেছে। বাম আমলে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত প্রসারিত গণতন্ত্র ছিল উন্নয়নের ভিত্তি। কিন্তু এখন তা ধ্বংস হয়েছে।

এর সঙ্গে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপিকে সাম্প্রদায়িকতার ইস্যুতেও তার বিবৃতিতে বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ—যা ছিল পশ্চিমবঙ্গের গর্ব, এখন তা বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। একদিকে তৃণমূলের স্বৈরতান্ত্রিক দাপাদাপি, অন্যদিকে বিজেপির বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে সর্বনাশা আর্থিকনীতি, বিভেদের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ। যার পেছনে রয়েছে আরএসএসের ভয়ঙ্কর মতাদর্শ। এরই পরিণতি রাজ্যের আজকের এ ধ্বংসচিত্র। রাজ্যের এ হাল ফেরাতে নতুন প্রজন্মই সক্ষম হবে বলেও মনে করছেন অসুস্থ, গৃহবন্দি এ মার্কসবাদী কমিনিউস্ট নেতা।

এর সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান হাল বদলাতে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভরসা রেখেছেন নবপ্রজন্মর ওপর। শিল্প ও কর্মসংস্থানের দাবিকে সামনে রেখে তরুণ প্রজন্মের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে যেভাবে পথে নেমেছেন, তা এ ভোটের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, এ তরুণ প্রজন্মই রাজ্যের সামনে তৈরি হওয়া বিপদ রুখে দিতে পারবে। আর এ লক্ষ্যপূরণে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফকে নিয়ে তৈরি স্বৈরতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মানুষের জোট তথা সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন করার আবেদন জানালেন সিপিএমের এ বর্ষীয়ান নেতা। যদিও সেদিনের ঘটনায় কারা দায়ী তা নিয়ে একটি কথাও লেখেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২১
ভিএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।