ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

ভারত

কী আছে জম্মু-কাশ্মীরের সেই ৩৭০ ধারায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৯
কী আছে জম্মু-কাশ্মীরের সেই ৩৭০ ধারায়

কলকাতা: ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ; যা কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়। কিন্তু এবার সেই অনুচ্ছেদ বিলোপ করার ঘোষণা দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

৩৭০ অনুচ্ছেদের কারণে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য যেকোনো ভারতীয় রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো। এছাড়া এই ধারাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ এ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়। এছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়।

সোমবার (০৫ আগস্ট) সংসদে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিরোধীদের তুমুল বাধা ও বাক-বিতণ্ডার মধ্যে এই অনুচ্ছেদ রহিত করার ঘোষণা দেন। এনিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।  

পড়ুন>>জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা বাতিলের ঘোষণা

এই ৩৭০ ধারাটি ভারতের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। ১৯৫৪ সালে এর সঙ্গে ৩৫ -এ ধারা যুক্ত করা হয়। এই দুই ধারা বলে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতাভুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে)। অর্থাৎ সারা ভারতে যে সংবিধান বলবৎ ছিল জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা ছিল ভিন্ন।  

বিভিন্ন সময়ে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। অবশেষে ভারত সরকার কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা করেছে। ৩৭০ ধারার মাধ্যমেই কাশ্মীর রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে লোকসভা সংসদের ক্ষমতাও সীমিত।  

এবার দেখা যাক- ৩৭০ ধারায় কি কি সুযোগ-সুবিধা পেতেন কাশ্মীরের নাগরিকেরা।

১) জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের দুটি নাগরিকত্ব থাকে।  
২) জম্মু-কাশ্মীরের রাষ্ট্রীয় পতাকা আলাদা।
৩) জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার কার্যকাল ৬ বছরের, যা অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে ৫ বছরের হয়ে থাকে।
৭) এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের ভিতরে ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকার অপমান করা অপরাধ নয়।
৮) জম্মু-কাশ্মীরের কোনো মহিলা ভারতের ২৯ রাজ্যের মধ্যে ২-৩টি ছাড়া বাকি রাজ্যর পুরুষের সঙ্গে বিবাহ করলে ওই মহিলার জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিত্ব সমাপ্ত হয়ে যায়।  
৯) ঠিক একইভাবে ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের কোনো মহিলা জম্মু-কাশ্মীরের কোনো বাসিন্দাকে বিয়ে করলে তিনি জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকত্ব পেয়ে যান। এমনকি পাকিস্তানি কোনো নারী জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিককে বিয়ে করলেও তার সমস্যা হয় না। সে কশ্মীরের নাগরিকত্ব পায়।
১০) ৩৭০ ধারার বলে ভারতের সংবিধানের কোনো ধারা জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকর হয় না।
১১) ৩৭০ ধারার বলে পাকিস্তানের কোনো নাগরিক জম্মু-কাশ্মীরে থাকলে তিনিও ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যান।
১২) জম্মু-কাশ্মীরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার আইন নেই।
১৩) ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বা আদেশ জম্মু-কাশ্মীরে প্রয়োগ হয় না।
১৪) জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা ভারতের কোথায়ও জমি কিনতে পারেন না।

জম্মু-কাশ্মীরের জন্য রয়েছে আলাদা সংবিধান

৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতোই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়বে কাশ্মীরে। ইতোমধ্যে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে ভারতে। মনে করা হচ্ছে- এই বিতর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরালো হতে চলেছে।

এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মোদী সরকারের কট্টর বিরোধী দল বহুজন সমাজ পার্টি, অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিরা মুনেত্রা কাজাঘাম (এআইএডিএমকে), বিজু জনতা দল (বিজেডি), ওয়াই এস আর কংগ্রেসসহ একাধিক দল।  

যদিও জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ ভারত সরকারের এই পদক্ষেপে বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের নাগরিকদের সঙ্গে বিস্ময়করভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মোদী সরকার। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৯
ভিএস/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।