ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

হারানো বাংলা শব্দের হদিস দেবে বিশ্বভারতীর ‘তুলোটপুঁথি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
হারানো বাংলা শব্দের হদিস দেবে বিশ্বভারতীর ‘তুলোটপুঁথি’ প্রাচীন পুঁথি।

কলকাতা: ভাষার মাসে বিশ্বভারতীর পুঁথিশালা থেকে খোঁজ মিললো তিনশো বছরের প্রাচীন একটি বাংলা পুঁথির। ফলে হারিয়ে যাওয়া বাংলা ভাষার বহু শব্দের হদিস মিলবে। 

এমনটাই মনে করছেন রবীন্দ্র ভবনের অধ্যক্ষ অমল পাল। তুলোট কাগজের উপর শরের (এক প্রকার ঘাসের তৈরি কলম) কলমে, ভুসোকালি দিয়ে লেখা পুঁথিটি; ১৯৬১ সাল থেকে বিশ্বভারতীর পুঁথিশালার আলমারিতে বদ্ধ অবস্থায় ছিলো এটি।


 
অপ্রকাশিত পুঁথিটি বাংলা সাহিত্যের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, তা ৫০ বছর আগে লিখে গিয়েছিলেন পুঁথি বিশেষজ্ঞ পঞ্চানন মণ্ডল। কিন্তু এতগুলো বছরে বিশেষ কেউ-ই আগ্রহ দেখাননি এ বিষয়ে। ফলে এতদিন সংগ্রহশালার আলমারিতেই বন্দি হয়েছিল এই দুর্লভ শব্দভাণ্ডার। এবার সেই পুঁথি অভিধান প্রকাশের উদ্যোগ নিলো বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র ভবন।
 
বিশ্বভারতীর জনসংযোগ কর্মকর্তা অনির্বাণ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, রবীন্দ্র ভবনের লিপিকা পুঁথিশালায় রক্ষিত থাকা হাতে লেখা পুঁথিটি, গ্রন্থ আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা প্রাচীন বাংলাসাহিত্য অধ্যয়নরতদের সহায়তা করবে।
 
উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতনের সূচনালগ্ন থেকেই পুঁথি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই কাজে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন বহু অধ্যাপককে দেশে-বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সংগৃহীত সেইসব পুঁথি একত্রিত করে একটি পুঁথিশালা গড়ে তোলা হয়েছিল বিশ্বভারতীতে। এই পুঁথিসংগ্রহ এবং তা নিয়ে গবেষণার কাজে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যমত স্নেহের পাত্র পঞ্চানন মণ্ডল। তিনি বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার পাশাপাশি পুঁথি সংগ্রহের কারণে বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরেছিলেন।
 
সেই সময়ই বীরভূমের কুড়মিঠা গ্রামের পণ্ডিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রহে থাকা পাঁচশো পাতার একটি জীর্ণপুঁথি হাতে আসে পঞ্চানন মণ্ডলের। সেই জীর্ণপুঁথি আসলে একটি প্রাচীন বাংলা অভিধান। পুঁথিটির পাতার বা দিকে বর্ণমালা ধরে পরপর লেখা হয়েছে মুখ্যশব্দ।  

আর প্রতিটি শব্দের পাশে রয়েছে শব্দার্থ। (অপত্রপ-লাজুক,লজ্জাশীল/ আশংসা-অনুভব,সন্দেহ/ কাকোলী- জ্বরনাশক ঔষধ/ জলজলাট- চকচকি, উজ্জ্বল)
 
১৯৬১ সালে ১৯ জানুয়ারি পুঁথিটি বিশ্বভারতীর পুঁথিশালায় আসে। তবে জীর্ণ এই পুঁথিটি কার রচনা, তার কোনো হদিস মেলেনি। কারণ পুঁথিটির প্রথম এগারও পাতা পাওয়া যায়নি।  

তার পরের পাতাগুলো পাওয়া গেলেও, তা থেকে পুঁথিকারের নাম পাওয়া যায়নি। ফলে পঞ্চানন মণ্ডল এটির নামকরণ নিজেই করেছিলেন- বাঙ্গালা অভিধান। এই অভিধানের গুরুত্ব কতখানি তা বোঝাতে, তার লেখা -পুঁথি পরিচয় গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, অবিলম্বে পুঁথিটি ছাপানো দরকার।
 
এ বিষয়ে রবীন্দ্র ভবনের বর্তমান অধ্যক্ষ অমল পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি পঞ্চানন মণ্ডলের পুঁথি পরিচয় বইটি পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই এই পুঁথিটির খবর পাই। বিশ্বভারতীর পুঁথিশালা থেকে এই পুঁথিটি বের করে তা নিজে পড়ার পর লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু করি।  

‘এটি ছাপা হলে বহু প্রাচীন সাহিত্য পড়ার সুবিধা হবে। কারণ এতে এমন বহু শব্দ আছে, যা বাংলাশব্দ ভাণ্ডার থেকে হারিয়ে গেছে। সেই শব্দগুলোর হদিস মেলাই শুধু নয়, তার সমার্থক শব্দও রয়েছে পুঁথিটিতে।
 
৫৭ বছর আগে এই পুঁথি বিশ্বভারতীর পুঁথিশালায় এলেও তা ছাপানোর জন্য তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই প্রথম সেই প্রাচীন পুঁথিটি, গ্রন্থ আকারে আগামী ২২ শ্রাবণ (রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস) নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিলো বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র ভবন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।