ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

মমতার ‘সত্যাগ্রহ’ চলবেই 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯
মমতার ‘সত্যাগ্রহ’ চলবেই  ধর্না মঞ্চে মমতা। ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা: কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাসায় সিবিআই (সেন্টাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এর হানাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলন চলবে। 

রোববার (০৩ জানুয়ারি) রাত থেকেই ধর্মতলায় এ অহিংস ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলন শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।  সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার ধর্নাস্থল কলকাতার ধর্মতলার মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা দেন, তার ধর্না ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।



আর এ সময়টায় সেখানেই অবস্থান করেই দল বা সরকারের সব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমা।  

পড়ুন>>ফের ধরনায় মমতা, রাজ্যপালের দ্বারস্থ সিবিআই

তিনি বলেন, সাংবিধানিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে এই আন্দোলনে সমর্থন জানানো হয়েছে। যারা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক কাঠামোয় বিশ্বাস করেন, তারাই এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এটা কোনো একার আন্দোলন নয়।  

খবরে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সারদা ও রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) ব্যবসার ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি রুপি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের দিকেও ওঠে অভিযোগের আঙুল।  

এ ঘটনার জের ধরে তদন্তের জন্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু তদন্তে যেসব তথ্যপ্রমাণ জব্দ করা হয়েছিল তা তিনি সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেননি বলে অভিযোগ করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদস্ত সংস্থা-সিবিআই।

এরই মাঝে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তৃণমূল নেতাদের রক্ষা করতেই এসব তথ্যপ্রমাণ গায়েব করে দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার রাজীব।

সিবিআইয়ের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য কয়েক দফা রাজীবকে নোটিশ পাঠালেও সাড়া দেননি। এ কারণে তাকেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আলোচনা চলছিলো কয়েকদিন ধরে।

আর এ পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যায় কলকাতার লাউডন স্ট্রিটে পুলিশ কমিশনারের বাসায় হাজির হয় সিবিআই। তখন সিবিআই-এর কয়েকজন সদস্য ওই বাসার ভেতরে ঢুকতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে সিবিআই কর্মকর্তাদের গাড়িতে তুলে প্বার্শবর্তী শেক্সপিয়ার সরণি থানায় নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। তবে কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।  

এ ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ কমিশনারের বাসায় যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রসহ ঊর্ধ্বতন কযেকজন কর্মকতা। এ সময় তাদের নিয়ে বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী।  

ওই বৈঠক শেষে বেরিয়ে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ- বিজেপির দুই গুণ্ডা মিলে বাংলায় ‘ক্যু’ করার চেষ্টা করছেন। যে ত্রাস শুরু হয়েছে তা জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়াবহ। ক্ষমতায় ফিরবেন না বুঝে মোদী পাগল হয়ে গেছেন। এবার কী রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি হবে, না কি ৩৫৬?

তখনই তিনি ঘোষণা দেন, ভারতের ‘সংবিধান রক্ষায়’ ধর্নায় বসবেন। যেই কথা সেই কাজ। রাতেই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে শুরু হয় তার সেই প্রতিবাদী অবস্থান। এ সময় তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের পাশাপাশি তার পাশে ছিলেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও।  

এদিকে ধর্না মঞ্চের পেছনে থানা কলকাতা পুলিশের ফাঁড়িতে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন তিনি। প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠকে মূলত আলোচনা হয় বাজেট নিয়ে।  

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার আগে মন্ত্রিসভার অনুমতি নিতে হয়। আর সেজন্য ধর্না মঞ্চের কাছেই এই বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।  

বৈঠকের পর বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন মন্ত্রীরা। সেখানে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এর আগে ধর্মতলার ধর্না মঞ্চ থেকেই কৃষক সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেন তৃণমূল প্রধান।  

এ সময় বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে মমতা বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে মোদী সরকার। নোট বাতিলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা; কৃষকদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই সরকার।

এদিকে ধর্নায় সমর্থন জানিয়ে রাত থেকেই মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন ভারতের বিরোধী নেতারা। রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব ও ওমর আবদুল্লাহ ফোন করেছেন বলেও জানান মমতা।  

এর মধ্যে টুইট করে তার পাশে থাকার কথা বলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।  

তবে এ অবস্থায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার দাবি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৯
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।