ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

ফ্লাইওভার ভাঙা নিয়ে ‘সান্ত্বনা’ দিচ্ছেন মমতা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮
ফ্লাইওভার ভাঙা নিয়ে ‘সান্ত্বনা’ দিচ্ছেন মমতা ঘটনাস্থলে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: ব্যস্ত সময়ে মঙ্গলবার (০৪ সেপ্টেম্বর) আকস্মিক হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দক্ষিণ কলকাতার মাঝেরহাট ফ্লাইওভার। এ দুর্ঘটনার দায় কার? রাজ্য প্রশাসনের? না-কি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত রেলের? তা নিয়ে চলছে দোষ চাপাচাপি। যদিও সবকিছু পেছনে ফেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সবাইকে ‘সান্ত্বনা’ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কে বা কারা দায়ী এ ঘটনায়, তা বুঝে উঠতে না পেরে উত্তর খুঁজছে পুলিশও। কলকাতার আলিপুর থানায় মামলাও রুজু হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে।

অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা কেনো সে বিষয়ে পুলিশের যুক্তি ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার কারণ এখনও সামনে আসেনি। অন্তর্ঘাত রয়েছে কি-না সেটাও তদন্ত সাপেক্ষ। তাই আপাতত অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা।

এদিকে, এতো বড় বিপর্যয়ের একদিন পরেও কেনো অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা, প্রশ্ন তুলছেন সরকার বিরোধীরা।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ জানে না কার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, পুলিশ তাই করছে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের পূর্তমন্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে নামিয়ে দেওয়া উচিত।

কেন্দ্রীয়ভাবে রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয় বর্গীয় বাংলানিউজকে বলেন, একের পর এক ব্রিজ-ফ্লাইওভার ভাঙছে রাজ্যে। মানুষের জীবনের কোনো ভরসা নেই। আগামীতে মানুষ বিচার করুক রাজ্যে এই সরকার থাকা উচিত কি-না।  

বামফ্রন্টের তরফ মোহাম্মদ সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর যৌথভাবে দায়িত্ব পড়ে এই ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের। তারা কি জানতেন না কি হচ্ছে এখানে?
 
যদিও সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তারপরও সরকারি ফরেনসিক দলের কাছ থেকে প্রাথমিক তদন্তের যা জানা গেছে তা হলো, দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে পড়ে থাকা ‘রুগ্ন ফ্লাইওভারটিতে’ সমস্যা দেখা দিলেও ভালো করে কোনো সময় মেরামত করা হয়নি। নতুন প্রলেপ দেওয়ার আগে নিয়ম মতো পুরনো প্রলেপ ফেলে দেওয়া উচিত। কিন্তু এটার মেরামতের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

অপরদিকে, দার্জিলিং সফর শেষে ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মাঝেরহাট ফ্লাইওভার পরিদর্শনে যান। সেসময় সঙ্গে ছিলেন নগর উন্নয়ন ও পূর্তমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রশাসন।

পরিদর্শন শেষে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সবাই যেটা পর্যবেক্ষণ করলাম সেটা হচ্ছে, এটা খুব বড় ঘটনা হতে পারতো। ফ্লাইওভারটা ভেঙে পড়ায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। ঈশ্বর সহায়, তা হয়নি। মানুষই মানুষকে রক্ষা করেছে। তার মধ্যে খুবই দুঃখজনক ঘটনা, একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তারমধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাদবাকি আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল এবং তাদের চিকিৎসা চলছে।
 
তিনি বলেন, এ ঘটনায় যিনি মারা গেছেন, আমি কালও এ ব্যাপারে বলেছি, মৃত্যুর বিকল্প কখনও টাকা বা অন্য কিছু হয়না। তবুও সেই পরিবারকে চলতে হবে। আমি তার বাড়িতে লোক পাঠিয়েছি পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি দেওয়া হবে। এছাড়া যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদের এক লাখ রুপি ও বাকি আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে সরকার তাদের চিকিৎসার দিকে সম্পূর্ণ লক্ষ্য রাখবে।  

মমতা বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবেলা এবং এলাকার মানুষের সহযোগিতার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া এই ফ্লাইওভারের কাছে মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছিল। তাদের ভাইব্রেটরের কম্পনে ব্রিজের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

যদিও মঙ্গলবারই একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, এ ব্রিজ ভাঙার জন্য তারা দায়ী নয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো দুর্যোগকে ছোট করে দেখছিনা। এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।

এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আরও একজনের মরদেহ ভাঙার স্তুপ থেকে বের করা হয়।

বৃহস্পতিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজ্যের প্রশাসন ভবন নবান্নে মাঝেরহাট ফ্লাইওভার নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিটিং ডেকেছেন। সেখানে হয়তো প্রকাশ্যে আসবে কেনো ভেঙেছে ফ্লাইওভার এবং কে দায়ী তাতে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮
ভিএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।