ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে রাজনাথের বৈঠক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে রাজনাথের বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা প্রশ্নে পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনাথ; ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাঁচ রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ভবন নবান্নের সভাগৃহে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, বাংলাদেশ হয়ে এবং বাংলাদেশ থেকে কথিত জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকানো, সীমান্তে বাকি কাঁটাতারের বেড়া ও বর্ডার আউটপোস্টের জন্য বাড়তি জমি বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়া বৈঠক ডাকার আরেক উদ্দেশ্য ছিল জাল নোট পাচার ও চোরাচালান রোধের কৌশল ঠিক করা।

বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তবর্তী পাঁচ রাজ্যের শীর্ষ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এহেন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবারই প্রথম হল কলকাতায়।

যে সাতটি রাজ্যকে নিয়ে এই বৈঠক হয় সেগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা। নবান্নে, সীমান্ত সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় বসেন রাজনাথ সিং।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। উপস্থিত ছিলেন না মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথানওয়ালার। এছাড়া ব্যক্তিগত কাজের জন্য উপস্থিত ছিলেন না ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও। তবে তাদের জায়গায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্রসচিব, মুখ্য সচিব, পুলিশের ডিজি (ডিরেক্টর জেনারেল) এবং অন্য শীর্ষস্থানীয় কর্তারা। গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বর্ডার ম্যানেজমেন্ট শাখার শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও বিএসএফের ডিজি কে কে শর্মাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা প্রধানরা। এছাড়া ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও।

নবান্নে এ বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতেই কলকাতায় চলে আসেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

ভারতের এই পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমানার ৪ হাজার ৯শ ৬.৭ কি.মি. ছুঁয়ে রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। ২ হাজার ২১৭ কি.মি. সীমান্ত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। এছাড়াও ত্রিপুরার রয়েছে ৮৫৬ কি.মি., আসামে ২৬২ কি.মি.,  মেঘালয়ের রয়েছে ৪৪৩ কি.মি. এবং মিজোরামের ১৮০ কি. মি.।

দুই দেশের সীমানার মধ্যে অর্ধেক অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জমির সংস্থান ঠিকঠাক না হওয়ায় বাকি কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্ত চৌকি তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে।

কেন্দ্রের দাবি, জমি চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের তরফে একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই পাঁচ রাজ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বেশ কিছুটা অংশ নদীবেষ্টিত হয়ে থাকায় সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রাজ্যগুলি সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

বিএসএফ তরফে জানানো হয়, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে মালদহ পর্যন্ত নদী সীমান্ত রয়েছে ৭০ কি.মি.। যার মধ্যে রয়েছে জাল নোটের সেন্টার বলে পরিচিত মালদহের কালিয়াচকও। এছাড়া আসমের ধুবড়ি, মেঘালয়ের গারো হিলস, ত্রিপুরার বিলোনিয়াতেও রয়েছে এরকমই কিছু অরক্ষিত সীমান্ত।

জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিস্তর ঘটনা এইসব এলাকা দিয়েই ঘটছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। ওই সমস্ত অংশ দিয়েই অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, জাল নোট পাচার চলছে বলে রাজ্যগুলির তরফেও জানানো হয়েছে।

বিএসএফের দাবি, নদীবেষ্টিত এই সব সীমান্ত পাহারায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ও লেজারের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী সূত্রে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় ৮৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।

সীমান্তবর্তী জেলার প্রতিটি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর ওপর বারবার জোর দিয়েছেন। সীমান্ত এলাকার থানাগুলিতে বেশি সংখ্যায় ওয়াচ টাওয়ার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কে আসছে, কোথায় যাচ্ছে, তা জানতেও গোয়েন্দা দপ্তরকে বাড়তি সতর্ক থাকার নিদান দিয়েছেন মমতা।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানানো হয় নবান্ন থেকে।

বৈঠক শেষে রাজনাথ সিং সাংবাদিকদের বলেন, আজকের এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ইন্দো-পাক ও ইন্দো-চায়না নিয়ে অন্যান্য রাজ্যের সাথে বৈঠক হয়। আমি মনে করি, বর্ডার মানে দুই দেশের সুস্পর্ক, সিকিউরিটি, লাগোয়া সীমান্তবর্তী এলাকার উন্নতি হওয়া উচিত। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যে ৪ হাজার ৯শ ৬.৭ কিমি সীমানার মধ্যে ১ হাজার ৯০ কিমি এলাকায় কাঁটাতার দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে টেকনলজির মাধ্যমে বেড়া দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তা সত্ত্বেও প্রতিটা দেশকে নিজের সীমান্ত নিরাপত্তার ব্যাপারে তৈরি থাকা উচিত বলে মনে করি। এছাড়া বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে যে জঙ্গীরা ভারতে আসতে পারে, এ নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। ভারতেরও কিছু জঙ্গি বাংলাদেশে লুকিয়ে আছে। তাদের ধরতে আমরা সেদেশের সরকারের সাহায্য চাইব। এছাড়া প্রতিটা রাজ্যের কিছু দুর্বলতা আছে। তাও আমি নোট করে নিয়েছি। সবশেষে বলব আজকের বৈঠকে সুষ্ঠু আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
ভিএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।