ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

ভারতে ফের দুই বিতর্কিত ছবি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
ভারতে ফের দুই বিতর্কিত ছবি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু

কলকাতা: ভারতে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে চরম বিতর্ক চলার পর এবার গুজরাটের গোধরা কাণ্ড নিয়েও ছবি আসতে চলেছে বড়পর্দায়। একই সাথে আসতে চলছে মমতার বাংলাকে নিয়ে তৈরি ছবি।

‘এক্সিডেন্ট ওর কন্সস্পিরিয়েন্সি গোদরা’ এবং ‘দ্য ডায়েরি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’। সম্প্রতি দুটি ছবির ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে ভারতে, যা নিয়ে ফের একবার বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।

২০০২ সালে ভারতে ঘটে যাওয়া গুজরাটের সেই অগ্নিগর্ভ সময়কেই এবার সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ মে) ইউটিউবে প্রকাশ্যে এসেছে সে ছবিরই টিজার। দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র? তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে ঠিক কী ঘটেছিল গুজরাটে, সিনেমায় এই প্রশ্নই তুলেছেন পরিচালক এমকে শিবাক্ষ। পরিচালক জানিয়েছেন, আমার এই ছবি কোনও প্রোপাগান্ডা নয়। কাল্পনিকও নয়। গোধরা কাণ্ড নিয়ে নানাবতী শাহ মেহতা কমিশন যা বলেছিল, সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এই ছবি বানিয়েছি।

পরিচালক আরও জানিয়েছেন, এই ছবি হঠাৎ করে তৈরি করা হচ্ছে না। কাশ্মীর ফাইলস বা কেরালা স্টোরি দেখেও আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি বানাইনি। গত পাঁচ বছর ধরে গোধরা কাণ্ড নিয়ে গবেষণা করেছে আমাদের ছবির রিসার্চ টিম। তারপরই ছবিটা বানাতে পেরেছি।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরা স্টেশন থেকে রওনা হওয়া সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল উন্মত্ত জনতা। নিরপরাধী ৫৯ জন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনার পরে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় পরিস্থিতি এমনই মারাত্মক আকার নেয় যে খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী জনসাধারণের কাছে শান্তির আবেদন করেন।

অপরদিকে, ১১ মে ‘দ্য ডায়েরি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’ ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। ট্রেলারে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের এখনকার অবস্থা কাশ্মীরের থেকেও শোচনীয়। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা কাঁটাতার পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করছে। ইউটিউবে মুক্তি পাওয়া বেঙ্গল ডায়েরির বিস্ফোরক ট্রেলারে দাবি করা হয়েছে বাংলার বর্তমান শাসকদল মুসলিমদের তোষণ করে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার, ধর্ষণ, গণহত্যার মতো বিষয়গুলি এখন বাংলায় রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি একটি চরিত্রও রয়েছে। হুবহু মুখ্যমন্ত্রীর মতো সাদা শাড়ি, চোখে চশমা পরে একজন নারীকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে এনআরসি, সিএএ করতে দেবো না। পাশাপাশি উঠে আসে মমতার নামও।

হিন্দি ভাষায় তৈরি বেঙ্গল ডায়েরির পরিচালনা করেছেন সনোজ মিশ্রা। ছবির ট্রেলার প্রকাশ্যে আসা মাত্রই বিভিন্ন মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরিচালকের বিরুদ্ধে বাংলার ভাবমূর্তি এবং সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাকে কলঙ্কিত করার অভিযোগে পরিচালকের বিরুদ্ধে কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ মে) পরিচালক সনোজ মিশ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতা ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের তরফে সনোজকে যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, তার তৈরি ছবিটিতে যা দেখানো হচ্ছে, তার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চায় পুলিশ। অবিলম্বে নির্দিষ্ট তারিখে থানায় যেনো হাজিরা দেয় পরিচালক। নোটিশ পাওয়ার পরই পরিচালক আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কলকাতায় এলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে এবং জেলে তাকে হত্যা করা হতে পারে। সেই অজুহাতে এদিন (৩০ মে) কলকাতা এড়িয়ে গেছেন সনোজ।

ভারতের এক ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমকে পরিচালক বলেছেন, আমি সন্ত্রাসবাদী নই। আমি কোনও অসাংবিধানিক কাজ করিনি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ছবির পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। হেনস্থা করার জন্য সমন পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধও জানিয়েছেন।

আগামী আগস্ট মাসেই ‘দ্য ডায়েরি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’ মুক্তি পেতে চলেছে। অপরদিকে, ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘এক্সিডেন্ট ওর কন্সস্পিরিয়েন্সি গোদরা’ বড় পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে। সিনেমা সমালোচকদের মতে, এই দুই ছবি ফের দেশজুড়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিতে চলেছে।

গত বছরের শুরুতেই বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। চলতি বছর প্রেক্ষাগৃহে এসেছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’, যা এখনও রমরমা ব্যবসা করে চলছে। সিনেমা বিশেষজ্ঞদের মতে, ছবিতে আহামরি তথ্য কিছু না থাকলেও মূলত বিতর্কে ভর করেই ছবিগুলি ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে। কোটি কোটি অর্থ উপার্জন করেছে। এবার দেখার গোধরা এবং বেঙ্গল ডায়েরিও ওই একই পথে হাঁটবে কিনা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।