ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

রমজানে কলকাতায় হালিমের স্বাদে মাতোয়ারা সব ধর্মের মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
রমজানে কলকাতায় হালিমের স্বাদে মাতোয়ারা সব ধর্মের মানুষ

কলকাতা: পবিত্র রমজান মাসে কলকাতার রেস্তোরাঁ থেকে স্ট্রিটফুডের খাওয়ারে কিছু বৈচিত্র্যের দেখা মেলে। শহরজুড়ে এমন কিছু খাওয়ার মেলে, যা অন্য সময় খুব একটা মেলে না।

তার মধ্যে অন্যতম হালিম। বিফ, মাটন, চিকেন এ তিন ধরনের হালিম মেলে কলকাতায় রমজানের সময়। তবে শীতেও কয়েক জায়গায় মেলে হালিম।

তবে রমজান মানেই হালিম স্বাদে আলাদা তৃপ্তি আনে। কারণ কলকাতার বড় রেস্তোরাঁগুলোয় হালিম পাওয়া যায় শুধুমাত্র রমজানে। ফলে সুস্বাদু হালিমের জন্য শহরবাসীকে অপেক্ষা করতে হয় বছরভর। মুলত এ সময় কলকাতাসহ রাজ্যের মফস্বল অঞ্চলের শহরগুলোতে হালিমের চাহিদা বাড়ে। মুসলিম সম্প্রদায় তো বটে। এ সময় কলকাতায় সব সম্প্রদায়ের মধ্যেও হালিমের চাহিদা যথেষ্ট লক্ষ্য করা যায়। তবে ক্রেতার চাহিদা বাড়লেও হালিম সারা বছর মেলে না শহরের নামিদামি রেস্তোরাঁগুলোতে।

কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল তপশিয়া এলাকার সিমলা বিরিয়ানি, পাক সার্কাসের জিসান, আর্সেনাল, আদিল, জমজমের মতো নামি রেস্তোরাঁগুলোতে রমজানের সময় ব্যাপক চাহিদা থাকে হালিমের। শহরে মাটন হালিম ১৮০ থেকে ২৭৫ রুপি পর্যন্ত। চিকেন হালিম ১৫০ থেকে ২৭৫ রুপি ও বিফ হালিম ১৭০ থেকে ২০০ রুপি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

কলকাতার পার্ক সার্কাসের অধিকাংশ রেস্তোরাঁর মালিকদের বক্তব্য, একে তো হালিম তৈরি করতে সময় লাগে, দ্বিতীয়ত হালিম প্রস্তুতির জন্য যে পরিমাণ ব্যয় হয় তাতে বছরভর হালিম বিক্রি করা অসম্ভব ব্যাপার। তাই শুধু রমজানের সময় মেলে। সাধারণত মাগরিবের পর হালিমের জন্য ভিড় বাড়ে কলকাতায়। চাহিদা থাকে রাত ১২টা পর্যন্ত।

রমজানে হালিমের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সত্ত্বেও বছরভর হালিম বিক্রি করতে সমস্যা কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তরে জিসানের মালিক মো. নাদিম বলেন, শহরের ফুটপাতে ৪০ রুপিতে হালিম পাওয়া যায়। তবে বড় রেস্তোরাঁগুলোতে বিশেষ করে আমাদের কথাই বলব, আমরা অনেক ধরনের এবং দামি ডাল ব্যবহার করি। তাছাড়া হালিম তৈরির জন্য যে মসলা ব্যবহার করা হয় তার দামও খুব বেশি। তাই আমরা শুধু রমজানের সময় হালিম বিক্রি করি। কারণ এ সময় চাহিদা খুব বেশি হওয়ায় তৈরির খরচ পুষিয়ে যায়। পাশাপাশি রমজান ও শীত বাদ দিলে বছরে অন্য সময় সে রকম চাহিদা থাকে না। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে রমজান মাসজুড়ে। তাই এ সময়টাই ভালো ও খাঁটি হালিম মেলে শহরজুড়ে।

তবে শহরের অন্যান্য অঞ্চলে সারা বছর হালিম না পাওয়া গেলেও নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিটসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সারা বছর হালিম মেলে। জাকারিয়া স্ট্রিটের বম্বে রেস্টুরেন্টের মালিক বলেন, এ অঞ্চলটা সারা বছর এক অঘোষিত ‘ফুড ফেস্টিবেল’ লেগে থাকে। যে কারণেই আমরা হালিম বিক্রি করার ভরসাটা পাই। এতটা ভিড় হালিমের জন্য কলকাতার অন্যান্য অঞ্চলে হয় না। সে কারণে শহরের অন্যান্য প্রান্তে শুধু রমজানেই হালিম মেলে।

রেস্তোরাঁকর্মীদের কথা মতে, হালিম প্রস্তুতিতে ভালো মানের ছয় থেকে সাত ধরনের ডালের প্রয়োজন। তার সঙ্গে বিভিন্ন রকমের মসলা, খাসি, মুরগি কিংবা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি হয় হালিম। ভিজিয়ে রাখা ডাল, মসলা ও মাংসের মিশ্রণে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় তৈরি হয় তরল সুস্বাদু হালিম।  

রোজাদারদের একাংশের মতে, হালিম অত্যন্ত ভারী খাবার। সারাদিন খালি পেটে থাকার পর হালিম যেমন শরীরে খাদ্যের চাহিদা মেটায় তেমন শরীর ঠিক রাখে। কিন্তু অন্য সময় হালিম হজম করাই বেশ কষ্টকর। তাই রমজানে হালিম খেয়ে কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।

অবশ্য ফুটপাতের দোকানগুলোতে সারা বছর হালিম পাওয়া যায়। কলকাতার নিউমার্কেট অঞ্চলে মাত্র ৪০ রুপিতে হালিম বিক্রি হচ্ছে। তবে ওই অঞ্চলের রেস্তোরাঁগুলোয় এ সময় হালিমের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি থাকে।  

নিউমার্কেটের ফুটপাতে হালিম বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, এখানে তো সারা বছরই হালিম পাওয়া যায়। বিক্রিও খারাপ হয় না। নিউমার্কেট ছাড়া পার্ক সার্কাস, বেগবাগান, চাঁদনীচক, খিদিরপুর এলাকায় ফুটপাতে হালিম পাওয়া গেলেও এ সময়টায় বেশিরভাগ মানুষ রেস্তোরাঁ থেকে হালিম কিনে বাসায় নিয়ে যান।

কলকাতার বেগবাগান অঞ্চলের এক মসজিদের কয়েক গজ দূরে বিক্রি হয় ‘চাচার হালিম’। আর্শাদ চাচা বয়সের ভারে দোকান সামলায় তার পরিবার। এখানের হালিম অনেকটা তরল সুপের মতো পাতলা। কালীঘাটের বাসিন্দা অরিন্দম। তার অভিমত, রমজানের সময়ই ভালো হালিম মেলে। আমারও পছন্দের খাবার, পরিবারও ভালো খায়। ডিনারের মেন্যুতে তাই এ মাসটায় হালিম রেখেছি। আর এ সময় শহরজুড়ে কিছু খাবার মেলে, যা অন্য সময় মেলে না। বিশেষ করে ইফতারের সময়।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।