ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

ভারত

কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা জমে উঠেছে শেষবেলায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২২
কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা  জমে উঠেছে শেষবেলায়

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): বাংলাদেশি বইপ্রেমী কলকাতাবাসীর মন ভারাক্রান্ত। কারণ শেষ বেলার ঘণ্টা বাজতে চলছে কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলার।

হাতে মাত্র একটা দিন। রোববারই শেষ হচ্ছে কলকাতার বই পাড়ায় আয়েজিত এবারের বাংলাদেশ বইমেলার।

গোটা কলেজ স্ট্রিট মানেই বই আর বই। তার সঙ্গে বাড়তি সংযুক্ত বাংলাদেশ বইমেলা। ফলে পুরো বইপাড়ায় এখন এপার বাংলা- ওপার বাংলা মিলে গেছে বইয়ের মোড়কে।

এমনিতে সারাবছর বাংলাদেশি বই সেভাবে মেলে না কলকাতায়। ফলে হাতে মাত্র একটা দিন। অনেকেরই মত এবার পাঠকদের চাহিদার কথা ভেবে স্থায়ী কিছু ভাবুক দুই বাংলা। বিশেষ করে কলেজ স্ট্রিট মানেই একাধিক ইউনিভার্সিটি থেকে কলেজ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেলা। সেখান শিক্ষার্থীদেরই এবার বাড়তি আগ্রহ চোখে পড়ার মতো।

উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারের বাসিন্দা হিমাংশুর অভিমত, কলকাতার পাঠকরা সব দেশেরই বই পড়তে ভালোবাসেন। আর একজন বাঙালি হয়ে বাংলাদেশ বইমেলা একটা কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এবার বইমেলা রবীন্দ্রসদন এলাকায় না হয়ে কলেজস্ট্রিটে হচ্ছে। ফলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটা মিস করতে চাইছি না। টিফিন টাইম হলেই একবার চলে আসছি বইমেলায়, সাধ্যমতো সংগ্রহ করছি নতুন বই।

দক্ষিণ কলকাতার সহেলী বোস বলেন, আমার পাঠ্যই হলো কবিতা নিয়ে গবেষণা। কবিতা পড়তেও ভালোবাসি, নিজেও কবিতা লিখি। ফলে কবিতার বইয়ের দিকে আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশের বই পড়ি এবং আগেও কিনেছি। এবার এখানেই এসেছি কিছু উদীয়মান কবির লেখা দেখতে। আবু এশাকের নতুন লেখা কবিতা আমার ভালো লাগে।

আদ্রিতা কলকাতা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ক্লাস করছিলাম। শেষ হতেই বাড়ি যাওয়ার পথে প্রতিদিন বাংলাদেশের বইমেলা একবার ঘুরে যাই। আজও তাই। তবে লেখক বলুন, আর সাহিত্য বলুন, আমার প্রিয়  হুমায়ুন আহমেদ।

এবার বাড়তি উৎসাহ ছিল উত্তর কলকাতাবাসীর। কারণ, প্রায় বাড়ির দোরগোড়ায় পেয়েছে ১০ম বাংলাদেশ বইমেলা। তবে, ঠিক ততটাই বিষন্ন দক্ষিণ কলকাতাবাসী। বিগত বছরগুলোতে বইমেলা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়। ফলে দূরত্ব থাকায় তাদের যাতায়ত সেভাবে হয়নি। ফলে অনেকই বলছেন, মধ্য কলকাতায় হলে সবার সুবিধা হয়। তাতে শহরের কোনো প্রান্তই নিরাশ হবে না।

এদিকে বিক্রেতাদের মতে লেখক পরিচিতি এবং বিক্রি, শহরের কোনো প্রান্তেই কম হয় না। বিগত বছরগুলোর মতো এবছরও চাহিদা এবং বাংলাদেশি বইয়ের চর্চা দুটোই সমান।

আর উদ্যোক্তাদের মতে, বাংলাদেশ থেকে আনা প্রায় ৭০ ভাগ বই বিক্রি হয়ে গেছে। তারা আশা করছেন রোববারের মধ্যে প্রায় সব বই বিক্রি হয়ে যাবে। ফলে প্রকাশকদের মুখেও চওড়া হাসি।

তবে, কলকাতাবাসী অনলাইন পেমেন্ট বা কার্ড পেমেন্টে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আর মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেভিড কার্ড হতেই শহরের সিংহভাগ মানুষ নগদ টাকা খুব একটা বহন করেন না। এতে অকেনটাই সমস্যায় পড়তে হয়েছে বিক্রেতাদের। তবে যারা আগ্রহী তারা শতবাঁধা উপেক্ষা করেই কিনছেন।

ফলে শেষ বেলাতেও সাজসাজ রব বাংলাদেশ বইমেলা নিয়ে কলেজ স্কয়ার জুড়ে। কোন বই চাই? সবই রয়েছে! শুধু একটু খুঁজে নিতে হবে। আসলে বাংলাদেশের বই মানেই পশ্চিমবাংলার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শেকড়ের টান, এক ইতিহাস এবং অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদ, সাদাত হোসাইন।

পুরনো প্রকাশকদের সঙ্গে এবছরও এসেছেন নতুন অনেকেই। অন্য প্রকাশের স্টলে যারাই আসছেন তারাই খুঁজছেন সাদাত হোসাইনের ‘তোমার নামে সন্ধ্যে না’। আবার কেউ হাতে তুলে নিচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’। সেই স্টলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যের বক্তব্য, এবছর বইমেলায় হুমায়ুন আহমেদ এবং সাদাত হোসাইন ছাড়াও বাংলাদেশের ইতিহাস কিংবা শেকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়গুলো ওপর বই ভালই বিক্রি হয়েছে।

বিশেষ করে সাদাত হোসাইনের বইয়ের পাতায় উঁকি দিয়ে যাচ্ছেন সবাই। ‘সে এখানে নেই’ এই বইটি রয়েছে সেই তালিকায়। আবার হিমু সমগ্র কিনছেন অনেকে। তুলনামূলকভাবে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের বেশি চাহিদা। এছাড়া ভক্তিগীতি থেকে, ধর্মীয় উপন্যাস আবার বেশ কিছু অনুবাদ- সবকিছুরই চাহিদা রয়েছে।

সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে ফটো ফিচার চোখে পড়বে। চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি ‘মুজিব কর্ণার। জাগৃতি প্রকাশনের মিশরীয় মিথলজি অনেকেই পছন্দ করছেন। আবার নতুন প্রকাশনের সঙ্গে এবার প্রথমবার এসেছে নালন্দা। যেন এক অন্য মাত্রা ছুঁয়ে দিয়েছে। এবার নালন্দার প্রধান আকর্ষণ ফারজানা মিতুর বেশ কিছু বই। স্টলে নিজেও উপস্থিত ছিলেন লেখিকা।

থ্রিলার, রহস্য এবং রোমাঞ্চ– সব মিলিয়ে লেখিকা নিজেও বেশ উত্তেজিত। কলকাতায় এসেছেন, তাও আবার বাংলাদেশ বইমেলায়। তার বক্তব্য, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যখন নিউ মার্কেটটা দেখি তখন মনে হয় এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি এদের? চারিপাশটা খুব সুন্দর। কলকাতা খুবই সুন্দর জায়গা। আলাদা অকর্ষণ আছে এখানে। সামনেই ২১শের বইমেলা। অনেক কাজ। তাই প্লানিং রয়েছে প্রচুর। ফের দেখা হতে পারে কলকাতা বইমেলায়।

এছাড়া বাংলাদেশ বইমেলায়  চলছে দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাশপাশি প্রতিটি বইয়ের স্টলে বাংলাদেশি বইয়ের বিপুল চাহিদা। আয়োজকদের মতে, কলকাতার বইপাড়া এমন একটা অঞ্চল যেখানে নিত্যদিন ভিড় লেগেই থাকে। একদিকে যেমন গোটা বাংলার পাইকারি ও খুচরা বইয়ের বাজার এই কলেজ স্ট্রিট অঞ্চল, অপরদিকে কলকাতা এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে কলেজ স্ট্রিটে। এছাড়া বাড়তি পাওনা কফি হাউসের আড্ডাপ্রেমীদের জমায়েত। ফলে কলেজ স্ট্রিট মানে বাংলাদেশ বইমেলার বাড়তি প্রচার। সেটাই আসল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সম্মিলিত উদ্যোগে গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ১০ম বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, কলকতাস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াসসহ বিশিষ্টজনেরা। এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে কলকাতার বইপাড়া বলে পরিচিত কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কয়ার প্রাঙ্গণে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলা ১০ম বাংলাদেশ বইমেলা শেষ হবে ১১ ডিসেম্বর।

এর কিছুদিন পরেই শুরু হবে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, তারপর বড়দিন এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মাতবেন শহরবাসী। আবার বছর পেরোলেই কলকাতা বইমেলা। আর তাই শীত মৌসুমে সবরকম উৎসব আয়োজনে ব্যস্ত কলকাতাবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৮ ঘণ্টা, ১০ ডিসেম্বর ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।